বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পরিবহনে চাঁদাবাজি :মুদ্রার উভয় পিঠ

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ২১:০৯

পরিবহন খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলার খবর অনেকটা পুরাতন। এই খাতের আরেকটি বড়ো সমস্যা হইল চাঁদাবাজি। ব্যাপক বিস্তৃত এই চাঁদাবাজির ফল ভোগ করিতে হইতেছে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, কর্মচারী হইতে শুরু করিয়া যাত্রী তথা সাধারণ মানুষকে। এই চাঁদাবাজির সহিত জড়াইয়া পড়িয়াছে একশ্রেণির পরিবহন শ্রমিক ও ক্ষমতাশীল মহলের আশীর্বাদপুষ্টরা। এই চাঁদাবাজি ছড়াইয়া পড়িয়াছে রাজধানীসহ সারাদেশে।

আমরা গত কিছু দিন যাবত্ সহযোগী কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে দেশের নানা জায়গায় প্রতিবাদের, মানববন্ধনের খবর পাইয়াছি। বিভিন্ন খবরের সূত্র হইতে জানা যায়, রাজধানীর চারটি টার্মিনালে, বিভিন্ন পয়েন্ট হইতে দৈনিক ২ কোটি টাকা করিয়া মাসে অন্তত ৬০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয় গণপরিবহনগুলি হইতে। রহিয়াছে ঘাট চাঁদা, বোবা চাঁদা, স্পট চাঁদা। রহিয়াছে মালিক-শ্রমিকের কল্যাণ ফি, রুট কমিটি, টার্মিনাল কমিটির চাঁদা। সায়েদাবাদ হইতে দেশের পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহের ৪৭টি রুটে চলাচলরত দুই সহস্রাধিক যানবাহন থেকে দৈনিক চলিতেছে চাঁদাবাজি। ইহার মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরসহ ৩২টি রুটে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ কোচ চলে। চাঁদা না দিয়া কোনো গাড়ি টার্মিনাল হইতে বাহির করিবার সাধ্য কারও নাই। চাঁদা নিয়া টুঁ শব্দ করিলে নির্যাতনসহ টার্মিনাল ছাড়া হইতে হয়। যশোরের অভয়নগরে নির্ধারিত লোকের নিকট হইতে মাসে ৫০০ টাকা করিয়া ইজিবাইক এবং ১ হাজার ৫০০ টাকা করিয়া মাহিন্দ্রের চালকেরা স্টিকার কেনেন। যেই সকল ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রের  স্টিকার লাগানো নাই, সেই সকল ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র থানায় নেওয়া হয়। পরে চালকদের নিকট হইতে টাকা নিয়া সেই সকল যানবাহন ছাড়িয়া দেওয়া হয়। ইহা ছাড়া যশোরের ঝিকড়গাছায়, হবিগঞ্জের মাধবপুরে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে, লক্ষ্মীপুর জেলায় চাঁদাবাজির খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হইয়াছে।

তবে চাঁদাবাজি যে একপাক্ষিক কারণে ঘটিতেছে, তাহা নহে। অনেক ক্ষেত্রেই চাঁদা প্রদান করা হইতেছে অবৈধ সুবিধা প্রাপ্তির জন্য। ফলে চাঁদাবাজি সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাইতেছে। চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কার্যকর কোনো পথ বাহির করিতে হইবে। পাশাপাশি সফলভাবে কার্যকর করিতে হইবে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮। নূতন আইনটি সম্পর্কে চালক-মালিক হইতে শুরু করিয়া সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতাও তৈরি করিতে হইবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাইয়া আনিতে না পারিলে উহা দিন দিন আরো বেশি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া যাইবে।