শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিনের প্রাদুর্ভাব

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ২১:১৭

রোগের নাম ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ। গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত একপ্রকার চর্মরোগ। বাংলাদেশে এই প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়াছে চট্টগ্রাম ও নওগাঁসহ কয়েকটি জেলায়। বিশেষত চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সাতকানিয়া এবং নওগাঁর রাণীনগর ও সাপাহার উপজেলার খামারি ও গবাদি পশু মালিকদের মধ্যে এই রোগ রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করিয়াছে। শুধু মিরসরাইয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার গবাদি পশু এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হইয়াছে। এইখানে মারা গিয়াছে ৮-১০টি গরু। এই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় ছড়াইয়া পড়িয়াছে এই রোগ। ফলে গবাদি পশু মালিকরা এখন দিশাহারা। তাহাদের উদ্বেগ কমাইতে এখনই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এই ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচিত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

গরু-মহিষের চর্মরোগ ল্যাম্পির কতিপয় উপসর্গ রহিয়াছে। এই রোগে প্রথমে পশুর পা ফুলিয়া যায়। ইহার পর জ্বর হইয়া দুই-তিন দিনের মধ্যে গোটা শরীরে বসন্তের মতো ফোসকা দেখা দেয়। ইহাই পরে ঘায়ে পরিণত হয়। এই সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয়। অনেক সময় ক্ষতস্থান পচিয়া গিয়া সেখান হইতে মাংস খসিয়া পড়ে। চামড়ায় গুটি ছাড়াও গলা ফুলিয়া যায়। তাহাতে জমে পানি। ফলে আক্রান্ত পশু ঠিকমতো খাইতে পারে না। প্রশ্ন হইল, এই ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ কেন হয়? বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, মশার মাধ্যমে এই রোগটি ছড়াইয়া থাকে। মশা একটি ছোট্ট প্রাণী। কিন্তু পতঙ্গটি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ অনেক প্রাণঘাতী রোগের বাহক। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের মাধ্যমে বুঝা যাইতেছে, মশার কামড়ের কারণে গবাদি পশুরাও নিরাপদ নহে। উল্লেখ্য, এই রোগ ১৯২৯ সালে প্রথম ধরা পড়ে জাম্বিয়ায়। পরে তাহা ছড়াইয়া পড়ে আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে। এই রোগ আগস্টে দেখা যায় ভারত ও চীনে। আমাদের দেশে গত ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে প্রথম তাহা শনাক্ত করা হইয়াছে।

আশার কথা হইল, এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। তবে রোগে আক্রান্ত হইলে ডেঙ্গুর মতো শুরুতেই যে প্রচণ্ড জ্বর হয় ও পুরো শরীর ফুলিয়া উঠে, তাহা স্বাভাবিকভাবে সারিতে লাগে ২০ হইতে ২৫ দিন। এই সময় গবাদি পশুর যত্ন-আত্তি নেওয়া দরকার। যেহেতু মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়, তাই মশা-মাছি বা কোনো প্রকারের পোকামাকড় যাহাতে গবাদি পশুর উপর বসিতে না পারে, সেইজন্য সতর্ক থাকিতে হইবে। প্রয়োজনে মশারি টানানোর ব্যবস্থা করিতে হইবে। এইভাবে এই রোগ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যাইতে পারে। অনেক সময় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় হইতে ঔষধ খাওয়ানোর পরও ক্ষত শুকায় না। এই জন্য প্রয়োজনে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ইনজেকশন প্রয়োগ করিতে হইবে। কৃষকদের বিনা মূল্যেই এইসংক্রান্ত ঔষধাদি সরবরাহ করা আবশ্যক। ইহা ছাড়া ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম ও সেবা জোরদার করা অত্যাবশ্যক।