শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাদক ব্যবসা কেন অপ্রতিরোধ্যই থাকিয়া যায়?

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪১

একটি দেশ যখন আগাইয়া যায়, তখন উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু বিষয় চলিয়া আসে। সরকার যেইভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে রুখিয়া দিয়াছে, তেমনিভাবে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুদ্ধ করিতেছে মাদকের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার এই বার্তা দিয়াছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। আমরা ইতঃপূর্বে মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাইবার কথা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখে একাধিক বার শুনিয়াছি। তাহার পরও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, সরকারের শীর্ষপর্যায়ের এইরূপ দৃঢ় অবস্থানের পরও মাদক ব্যবসা কেন অপ্রতিরোধ্যই থাকিয়া যায়?

মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে বেশ কয়েক বার সাঁড়াশি অভিযান চালাইয়াছে। বিভিন্ন অভিযানে কয়েক শত মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং প্রায় অর্ধলক্ষ গ্রেফতার হইয়াছে। কিন্তু তাহার পরও মাদকের ‘বিশাল হ্রদে’ এই সকল পদক্ষেপ যেন ‘সামান্য ঢেউ’ তুলিয়াছে মাত্র! দেখা গিয়াছে, মাদকসম্রাটদের প্রায় সকলেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সহিত যুক্ত। ইহাই স্বাভাবিক। এই ব্যবসা চালাইবার শর্তই হইল যখন যেই দল ক্ষমতায় থাকিবে তখন তাহার চন্দ্রাতপে আশ্রয় লওয়া। প্রশ্ন উঠিতে পারে, আশ্রয় চাহিলেই কি তাহা পাওয়া যায়? উত্তর রহিয়াছে মাদকের কাঁচা অর্থের নিকট। মাদক ব্যবসা হইল আঙুল ফুলিয়া টাকার কুমির হইবার মতো। এত সহজে এত বিপুল অর্থের মালিক আর কে হইতে পারিবে? এই কারণে মাদকের মাধ্যমে কাঁচা টাকার পাহাড় গড়িয়া তুলিবার ব্যবসা চিরকালই দারুণ জনপ্রিয়। এখন কাহারা এই ব্যবসা করেন, কোথায় কীভাবে ভাগবাঁটেয়ারা হয়, কোন নেটওয়ার্কে ইহা ছড়াইয়া পড়ে দেশব্যাপী, হিমবাহের চূড়ার মতো কত সামান্য অংশ ধরা পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে—এই সকল তথ্য পুলিশের অজানা নহে। কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, ৫০ টাকার মাদক আনিয়া যদি ৫০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয়, তাহা হইলে এই ব্যবসা কেন ছাড়িবে মাদক ব্যবসায়ীরা?  বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এত বিপুল কাঁচা টাকার লোভ সামলাইবার মতো ইস্পাতদৃঢ় আদর্শ অনেকের মধ্যেই নাই। এমনকি পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গিয়াছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের একটি অংশও এই ব্যবসার সহিত নানাভাবে জড়িত। আবার এমন উদাহরণও বিরল নহে যে মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা লইবার কারণে কোনো নীতিমান অফিসারকে নানান কৌশলে বদলি করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

এই সকল কারণে সরকারপ্রধান হইতে শুরু করিয়া দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করিবার পরও মাদকের স্রোত বহাল তবিয়তেই বহিয়া যায়। ইহা ঠিক যে, বিশ্বের অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রও হিমশিম খাইতেছে মাদক নির্মূলে। বিশ্বের অনেক সচেতন রাষ্ট্র তাহার তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক হইতে রক্ষা করিতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করিয়া থাকে। কোটি কোটি তরুণ-জীবন ধ্বংসের পাশাপাশি দেশকে অস্থিতিশীল করিবার মতো বিপুল অর্থের মালিকও হইয়া যায় মাদক ব্যবসায়ীরা। এই সকল কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপও বটে। সুতরাং তাহাদের নির্মূলের জন্য আরো স্মার্ট ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।