বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবাসিক হোটেলে নিরাপত্তাঝুঁকি

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৩৬

লজ্জারই কথা। সম্প্রতি জাতিসংঘ হইতে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হইয়াছে ঢাকার ফায়ার সার্ভিস বিভাগ বরাবর। চিঠিতে তাহারা ৩০টি হোটেলের নাম উল্লেখ করিয়া এই সকল হোটেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার যথাযথ মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়াছেন। তাহারা ৩০টি হোটেলের নাম দিয়াছেন এই কারণে যে, ঐ সকল হোটেলে সাধারণত জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসিয়া অবস্থান করিয়া থাকেন। অথচ এই সকল হোটেল আমরা মানসম্মত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকি। বিদেশি অতিথি আসিয়া অবস্থান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ এই হোটেলে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা একটি খুবই প্রাথমিক স্তরের শর্ত; কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই স্তরের হোটেলের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা সম্পর্কে জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানের তাগিদ দিতে হয়। ইহা কি লজ্জার কথা নহে?

জানা গিয়াছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পাঁচ তারকা খচিত মর্যাদাপূর্ণ  হোটেলসহ তালিকায় মোট ১৭টি হোটেল রহিয়াছে। ইহার মধ্যে ৯টি ব্যতীত সকলগুলি অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকিতে রহিয়াছে। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী ৩২৬টি বড়ো ও মাঝারি হোটেলের মধ্যে ৩১৭টি হোটেলই অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকিতে রহিয়াছে। ইতিমধ্যে ২৪৭টি হোটেল কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নোটিশ প্রদান করা হইয়াছে; কিন্তু কতটি হোটেলের কর্তৃপক্ষ এই নোটিশ অনুসরণ করিবেন তাহা লইয়া সন্দেহ রহিয়াছে। গত ৩০ মে হোটেলসংক্রান্ত বিধিমালায় তিন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেলে জরুরি নির্গমন পথ থাকিবার কথা বলা হইয়াছে (ইহা সাধারণত সকল বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেই বলা হইয়া থাকে); কিন্তু আমরা জানি, ঢাকার দুই-একটি ছাড়া বহু নামিদামি হোটেলেও এই ব্যবস্থা নাই।

আবাসিক হোটেল যাহারা নির্মাণ করিয়া থাকেন তাহারা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও দুই সিটি করপোরেশনের নিকট দায়বদ্ধ। এই সকল ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশনের নজরদারি বাড়াইতে হইবে। ইহার সহিত ফায়ার সার্ভিসকেও সম্পর্কিত রাখিতে হইবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হইতেছে, বাণিজ্য বাড়িতেছে। ইহার সহিত হোটেলসংখ্যাও ভবিষ্যতে বাড়িবে। মনে রাখিতে হইবে, একটি দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক বিনির্মাণে আবাসিক হোটেলের গুরুত্ব অপরিসীম। ইহা পর্যটনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশ কেবল নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত হোটেল পর্যাপ্ত না থাকিবার কারণে হারাইতে পারে পর্যটন আয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ। শুধু ঢাকা নহে, অতি সম্প্রতি ঢাকার বাহিরেও গড়িয়া উঠিতেছে বিলাসবহুল হোটেল। এই সকল হোটেল নির্মাণের ক্ষেত্রেও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সহিত নজর রাখিতে হইবে। হোটেলকে আকর্ষণীয় করিতে বহির্ভাগের সৌন্দর্য সৃষ্টির প্রয়োজন রহিয়াছে; কিন্তু ভিতরে  যথাযথ নিয়ম না মানিয়া বহির্ভাগ চকচক করিলে তাহা হইবে অসুস্থ শরীরে রঙিন পোশাক পরিধানের মতোই। আমরা আশা করিব, এই সকল বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল এবং যাহারা হোটেল ব্যবসায় নিয়োজিত হইতেছেন—উভয় পক্ষকেই সমান গুরুত্বের সহিত বিবেচনায় রাখিবেন। এখনো যেই সকল আবাসিক হোটেল নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারেন নাই, তাহারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারে মনোযোগ দিবেন।