বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করদাতার সংখ্যা ও স্বনির্ভরতা

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:১১

গত ৩০ নভেম্বর দেশব্যাপী পালিত হইয়াছে জাতীয় আয়কর দিবস ২০১৯। ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ স্লোগান ধারণ করিয়া এই বত্সর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘কর প্রদানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, নিশ্চিত হোক রূপকল্প বাস্তবায়ন’। অর্থাত্, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হইবার স্বপ্ন দেখিতেছে, তাহা বাস্তবায়ন করিতে হইলে কর প্রদানের সংস্কৃতি সর্বত্র ছড়াইয়া দিতে হইবে। বাস্তবিক অর্থে রাষ্ট্রের সেবা পাইতে হইলে নাগরিকদের কর প্রদানের কোনো বিকল্প নাই। যাহাদের আয় করযোগ্য, তাহাদের অবশ্যই করের আওতায় আনা আবশ্যক। কর একজন সুনাগরিক নিজ হইতেই প্রদান করিবেন। উন্নত দেশে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরাও কর প্রদান করিয়া থাকে। আসলে বলা প্রয়োজন, তাহারা রিটার্ন দাখিল করে এবং তাহাদের আয় করযোগ্য হইলে কর প্রদান করে। কিন্তু আমাদের দেশে কর প্রদানের হার আশাব্যঞ্জক নহে। এই ক্ষেত্রে ব্যর্থতা লইয়া এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবশ্যই আত্মসমালোচনা করিতে হইবে।

জাতীয় আয়কর দিবসের অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলিয়াছেন যে, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই করদাতার সংখ্যা সবচাইতে কম। ১৬ কোটি মানুষের দেশ, কিন্তু কর প্রদান করে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। তাহার এই কথা অসত্য নহে। কারণ এক পরিসংখ্যানে জানা গিয়াছে, কর প্রদানের যোগ্য, এমন ৯৫ শতাংশই এখনো কর প্রদান করিতেছেন না। আরো দুঃখজনক হইল, টিআইএনধারীর সংখ্যা ৪০ লক্ষ হইলেও কর প্রদান করিতেছেন মাত্র ২০ লক্ষ মানুষ। প্রতি বত্সর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়িলেও এখনো তাহা আশানুরূপ পর্যায়ে উন্নীত হইতে পারে নাই। কেন পারে নাই এবং কেন কর প্রদানের সংস্কৃতি বিকশিত হইতেছে না, তাহা লইয়া আমাদের গভীর চিন্তা করা প্রয়োজন। তবে এই কথাও সত্য যে বাংলাদেশে মায়ের গর্ভে থাকা একজন শিশুকেও কর প্রদান করিতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এই দেশে ইনডাইরেক্ট বা পরোক্ষ কর এতটাই অধিক যে ডাইরেক্ট বা প্রত্যক্ষ কর প্রদানের প্রতি অনেকে উত্সাহী হইতেছেন না। তাহা ছাড়া কর প্রদানের পদ্ধতি কি আজও আধুনিক ও সহজ হইয়াছে? অবশ্য প্রতি বত্সর করমেলা আয়োজন করায় ইহার ইতিবাচক একটি প্রভাব সমাজে পড়িতেছে। তবে কর প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজ করিতে হইবে, যাহাতে প্রত্যেক নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর প্রদানে অনুপ্রাণিত হন।

সরকার ভবিষ্যতে করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে নিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করিতেছে। উন্নত দেশে পরিণত হইতে হইলে এই পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। এই জন্য যাহা করা প্রয়োজন তাহা হইল জনগণের মধ্যে করভীতি দূর করা। কর প্রদান কেন প্রয়োজন এবং কর প্রদানে নাগরিকগণ কীভাবে লাভবান হইবেন, তাহার ব্যাপারে সচেতনতা গড়িয়া তোলা আবশ্যক। একই সঙ্গে বড়ো বড়ো কর ফাঁকিবাজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে না দেখিয়াও অনেকে কর প্রদানে নিরুত্সাহিত হন। সর্বোপরি নূতন নূতন করযোগ্য ব্যক্তিদের করের আওতায় আনিতে প্রয়োজনে এনবিআরের জনবল বৃদ্ধি করা আবশ্যক। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে বলা হইতেছে ‘এশিয়ার টাইগার’। আর এশিয়ার টাইগাররা কর প্রদানে এশিয়ার মধ্যে পিছাইয়া থাকিবে, তাহা হইতে পারে না।