বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইটভাটা :সমস্যার বহুমুখী রূপ

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪৪

বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীসহ ইহার আশপাশে বায়ুদূষণ যখন মারাত্মক আকার ধারণ করিয়াছে, তখন এই দূষণের উল্লেখযোগ্য নিয়ামক হিসাবে ইটভাটার কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হইতেছে। এক হিসাবে, দেশে বর্তমানে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৮ হাজার ৩৩টি। পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, এইগুলির মধ্যে ২ হাজার ৫১৩টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নাই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, এই সংখ্যা অনেক বেশি হইবে, তাহাদের মতে, ছাড়পত্র থাকিলেও দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ইটভাটা যথাযথ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করিতেছে না। ফলে তাহাদের দ্বারা পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হইতেছে। সারাদেশেই ছড়াইয়া আছে এই ইটভাটা। সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক সংবাদ মারফত জানা গিয়াছে, গাজীপুরের কাপাসিয়ার ৩৪টি অবৈধ ইটভাটা সেইখানকার প্রাণ-প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ বহুমুখী। প্রথমত, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই শত শত একর কৃষিজমিতে গড়িয়া উঠিয়াছে ইটভাটা। দ্বিতীয়ত, ইটভাটায় ফসলি জমি ও এলাকার ছোটো-বড়ো টিলা কাটিয়া মাটি নিয়া তৈরি করা হইতেছে ইট। অনেক সময় জোর-জবরদস্তি করিয়া ফসলি জমির মাটি কাটিয়া লইলেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে সাধারণ কৃষকেরা মুখ খুলিতে পারিতেছেন না। তৃতীয়ত, নিয়মনীতি না মানিয়া অবৈধ এই সকল ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে ব্যাপক বায়ুদূষণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। এইরূপ ক্ষতিকর অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলি কীভাবে তাহাদের কার্যক্রম প্রশাসনের নাকের ডগায় চালাইয়া যাইতেছে, তাহা আমাদের বোধগম্য নহে। অথচ বিদ্যমান যে আইন রহিয়াছে, তাহাতেই ইটভাটাগুলি বন্ধ করিয়া দেওয়া সম্ভব।

গত ২০ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর হইতে প্রচারিত ‘ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনাসংক্রান্ত’ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হইয়াছে, সরকার ইট প্রস্তুত কার্যক্রমকে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩’ (সংশোধিত ২০১৯) জারি ও কার্যকর করিতেছে। উক্ত আইনে কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হইয়াছে। যেমন পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত বা পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করিতে পারিবেন না। সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাইবে না। অথচ এই আইন মান্য না করিয়া বনাঞ্চলের পাশে, লোকালয়, হাটবাজার ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়িয়া উঠিয়াছে ইটভাটা। অনেক ইটভাটায় গাছের গুঁড়ি পোড়ানোর কারণে কালো ধোঁয়ায় এলাকার লোকজনের মধ্যে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়াছে। পরিবেশদূষণের কারণে এলাকায় ফসলের উত্পাদনও ব্যাহত হইতেছে। আমরা মনে করি, শুধু ঢাকা ও ইহার আশপাশের জেলাগুলোর নয়, বরং সারাদেশের অনুমোদনহীন ইটভাটার বহুমুখী ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করিয়া অনতিবিলম্বে বন্ধ করিতে হইবে।