শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নুন-ভাত বনাম বিরিয়ানি প্রসঙ্গ

আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:০৩

১ ডিসেম্বর স্পেনের মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখিতে গিয়া আমাদের সরকারপ্রধান দেশের মানুষের উদ্দেশে একটি হূদয়স্পর্শী কথা বলিয়াছেন। বলিয়াছেন, ‘অসত্ পথে থেকে বিরিয়ানি খাওয়ার চেয়ে সত্ পথে থেকে নুন-ভাত খাওয়া অনেক ভালো।’ তাহার এই উক্তির মধ্যে গভীর তাত্পর্য রহিয়াছে। তিনি বলিতে চাহিয়াছেন, সততাই সর্বোত্কৃষ্ট পন্থা, সততাই মানুষের চলার পাথেয়। তিনি কতটা গভীর উপলব্ধি হইতে এই কথাগুলি বলিয়াছেন তাহা উপলব্ধি করিবার বিষয়। এই উক্তি গোটা দেশের মানুষ শুনিয়াছে। কিন্তু আসলে কর্ণকুহরে প্রবেশ করিয়াছে কি? যাহারা ‘নুন-ভাত’ খাইয়া দিনাতিপাত করিতেছেন অথবা করিতে হইতেছে তাহারা হয়তো সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার এই উক্তির তাত্পর্য উপলব্ধি করিতে পারেন। কিন্তু যাহারা ‘বিরিয়ানি’ খাইয়া সাবাড় করিতেছেন তাহারা সরকারপ্রধানের এই উক্তি শুনিয়া মুখ টিপিয়া হাসিয়াছেন। বলা বাহুল্য, ‘বিরিয়ানি’ শব্দটি তিনি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করিয়াছেন। তিনি সব ধনী লোককে উদ্দেশ্য করিয়া বলেন নাই। যাহারা অসত্ পথ অবলম্বন করিয়া কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ বানাইতেছেন, ভোগবিলাসে মত্ত হইয়াছেন, তাহাদেরকেই তিনি ইঙ্গিত করিয়াছেন। 

কি প্রশাসনের ভিতরে, কি প্রশাসনের বাহিরে—এই সম্প্রদায় দেশের সর্বক্ষেত্রেই বিরাজমান। সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলিতেছে। সেই কর্মযজ্ঞে ব্যয় হইতেছে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। বাংলাদেশের অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, মন্ত্রণালয় সর্বত্র রহিয়াছে বড়ো অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ। উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেখিলে চক্ষু বস্ফািরিত হয়। অথচ এই অর্থের একটি বড়ো অংশ চলিয়া যাইতেছে ‘বিরিয়ানি’-খেকোদের উদরে। ইহা সরকারপ্রধানকেই চিন্তা করিতে হইবে। হিতোপদেশ উহাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবে না। সরকারপ্রধানের এইরকম উপদেশের কারণে যদি একটি ক্ষেত্রে করাপশন বন্ধ হইত, তাহা হইলেও তাহার উক্তি নিষ্ফল হইত না। অধিকন্তু, দুর্নীতির মূল চালকের আসনে বসিয়া আছেন সরকারের কর্মচারী-প্রতিনিধিরা। তাহাদের যোগসাজশ ব্যতীত দুর্নীতির সুযোগ বিশেষ একটা নাই। এমন তো নহে যে, সরকারের এইসব কর্মকাণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ বা ক্ষমতা নাই। শুধু তাহাই নহে, প্রায়শই আমরা লক্ষ করি, সরকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দায়িত্বের কথা স্মরণ করাইয়া দিলে তাহারা অজুহাত দিয়া বলেন, লোকবল নাই, যথেষ্ট লজিস্টিক সাপোর্ট নাই। অথচ ইহা এখন প্রায় সর্বক্ষেত্রে সঠিক নহে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ হয় প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে। অথচ কেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীন? দেশে শুদ্ধি অভিযানের কথা শোনা গিয়াছে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও যাহাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলা উচিত, অথবা অভিযান চালাইবার কথা, তাহারা উপরতলায় বসিয়া হাসিতেছেন। সর্বাগ্রে যাহাদের চিহ্নিত হইবার কথা, তাহাদের একজনও কি চিহ্নিত হইয়াছেন? সুতরাং সকল দিকে তাকাইয়া মনে হইতেছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ নিঃসৃত মহতী উক্তি, যাহা একটি জাতির শাশ্বত সত্য হওয়া উচিত, তাহা বাতাসে ক্ষণিকের জন্য ভাসিয়া আবার বাতাসেই মিলাইয়া যাইতেছে।