শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রযুক্তির ব্যবহারে অবিশ্বাস্য গতি আসিতেছে

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪৫

দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার অবিশ্বাস্য গতিতে আগাইতেছে। কেবল বড়ো শহরেই নহে; উপজেলা, ইউনিয়ন, এমনকি কোনো কোনো গ্রামেও মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। ইতিমধ্যে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকাণ্ড অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হইতে শুরু করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পিছাইয়া নাই। তাহারাও এই অনলাইনের সুবিধা নিজেদের ব্যবহার ও জনসংযোগে ছড়াইয়া দিতে শুরু করিয়াছে। বর্তমানে ঢাকা রেঞ্জের ৯৬টি থানায় কম্পিউটার ও অনলাইন কার্যক্রম শুরু হইয়াছে। ইহার ফলে এজাহার, জবানবন্দি, স্বীকারোক্তি, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড কম্পিউটারভুক্ত করা হইতেছে। চিন্তা করিতেও স্বস্তি অনুভূত হয় যে এখন আর মামলার নথি হারাইয়া যাইবার ভয় থাকিবে না। পুরাতন ফাইল ঘাঁটিয়া মামলার নথিপত্র বাহির করিবার ঝামেলাও আর পোহাইতে হইতেছে না। সকল তথ্য নেটওয়ার্কের আওতায় থাকায় তদারককারী কর্মকর্তারাও অতি সহজেই সবকিছু জানিতে পারিতেছেন। পুলিশের মতো ব্যাপক কর্মযজ্ঞের একটি প্রতিষ্ঠানে এই প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত ইতিবাচক ফল আনিবে, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। ইতিমধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ ব্যবহারে জনগণের নিকট হইতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গিয়াছে। এই পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ইমার্জেন্সি সহায়তা পাইয়াছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতাল হইতে।

নিশ্চয়ই এই ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে সারাদেশেই ছড়াইয়া পড়িবে। পুলিশের কাজ যেমন সহজ হইবে, মানুষের সেবা পাইতেও বিলম্ব হইবে না। ইহা ছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে তৈরি করা হইয়াছে নতুন অ্যাপস। এমনকি কৃষকের ধান বিক্রয়ে স্বচ্ছতা আনয়নে এবং কৃষকের সুবিধার্থে সরকার নতুন ‘কৃষকের অ্যাপস’ নামে একটি অ্যাপস তৈরি করিয়াছে, যাহা সরকারের ধান-চাউল ও কৃষিপণ্য ক্রয়ে অনিয়ম ঠেকাইতে কাজ করিবে। সেই সঙ্গে কৃষক ঘরে বসিয়াই তাহার উত্পাদিত পণ্য কী পরিমাণ এবং কোন জাতের, সেই অনুসারে ঘরে বসিয়াই তিনি জানিতে পারিবেন, কোন কেন্দ্রে এবং কী মূল্যে তিনি তাহার পণ্য বিক্রয় করিতে পারিবেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ ধন্যবাদার্হ্য।

সত্যিই অবিশ্বাস্য গতিতে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারকে আগাইতে দেখিতেছি। মাত্র কয়েক বত্সর পূর্বেও এই সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় হইবার পর তাহার সুবিধার প্রয়োগেও বিশেষ বিলম্ব হইতেছে না। ইতিমধ্যেই অনলাইন আউটসোর্সিং হইতে লক্ষ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রবেশ করিতেছে। ঘুচিতেছে বেকারত্ব। এই প্রযুক্তি যত আগাইবে, আমরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যত ব্যবহারে সিদ্ধ হইয়া উঠিব, ততই দেশ অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হইয়া উঠিবে। মানুষের সকল ক্ষেত্রে আস্থা বাড়িবে, সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্ক ও কর্মকাণ্ড আরো নিবিড় হইবে। লক্ষণীয় বিষয় হইল, শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীও প্রযুক্তির ব্যবহারে আগ্রহী এবং ক্ষেত্রবিশেষে পারদর্শী হইয়া উঠিতেছে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহারে জনগণকে আরো উত্সাহিত করিতে হইবে।