শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জনসংখ্যাধিক্য প্রসঙ্গ

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:০৮

বর্তমানে বিশ্বে জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। জাতিসংঘের প্রকাশিত এক রিপোর্ট বলিতেছে, ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বে জনসংখ্যা বাড়িয়া দাঁড়াইবে ১ হাজার ৯০ কোটিতে। অথচ ১৯৫০ সালে ইহাই ছিল ২৫০ কোটি। অর্থাত্ বিশ্ব জুড়িয়াই জনসংখ্যা ক্রমগতভাবে বাড়িয়াই চলিয়াছে। জনসংখ্যার এই চাপ কমাইতে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হইতেছে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখিয়া প্রতীয়মান হইতেছে, আসলে এই সকল উদ্যোগ তেমন একটা ফলপ্রসূ হইতেছে না। বাংলাদেশের কথাই যদি ধরি, তাহা হইলে আমরা একই চিত্র দেখিতে পাই। একসময় দেশি-বিদেশি অর্থসহায়তায় জন্মনিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু ডানপন্থি রিপাবলিকানরা আমেরিকার শাসনক্ষমতায় থাকিবার কারণে সারা বিশ্বে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অর্থসহায়তা হ্রাস পাইয়াছে। কেননা, তাহারা জন্মনিয়ন্ত্রণের তত্ত্বে বিশ্বাসী নহে।

বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। বৃহত্ জনসংখ্যার দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ দেশও বটে। এইখানে এক বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে প্রায় ১ হাজার ১২০ জন। জনসংখ্যার এই মাত্রাতিরিক্ত ঘনত্বের কারণেই বিশ শতকের সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত্ নিয়া ওয়াকিবহাল মহলে ব্যাপক উদ্বেগ পরিলক্ষিত হইত। ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন আমাদের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১০ লক্ষ।  ২০১৮ সালে ছিল ১৬ কোটি ৬৩ লক্ষ ৭০ হাজার। অর্থাত্ জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারেই বাড়িয়াছে। অবশ্য এই ক্ষেত্রে আমাদের যে সাফল্য একেবারে নাই তাহা নহে। এই দেশে সত্তরের দশকে মোট প্রজনন হার ছিল ৬। এই হার হ্রাস পাইয়া এখন ২.৩-এ দাঁড়াইয়াছে। ইহাকে এখন ২-এর নিচে নামাইবার কথা বলিতেছেন অনেকে। কিন্তু গত তিন দশক ধরিয়া জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে একপ্রকার ভাটা পরিলক্ষিত হইতেছে। এমনকি এক খবরে বলা হইয়াছে যে, দেশে বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করিয়াছে। প্রায় ১২ শতাংশ ইচ্ছুক জনগোষ্ঠী এইসব সামগ্রী সহজ লভ্য না হওয়ায় ব্যবহার করিতে পারিতেছে না। এইজন্য এই সংক্রান্ত কার্যক্রমকে আবার অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন এই সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির নূতন উদ্যোগ।

কোনো দেশে যখন আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা সহনশীলতার মধ্যে থাকে না, তখন সেইসব দেশে কর্মসংস্থানের সংকট ও খাদ্যাভাব দেখা দেয়, শিক্ষা ও চিকিত্সার সুযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। অনেকে মনে করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ‘টাইম বোমার ওপরে দাঁড়াইয়া আছে বাংলাদেশ’। আগামী দশ-বিশ-পঞ্চাশ বত্সরে ইহাই যে ‘পারমাণবিক বোমার’ মতো বিস্ফোরণ ঘটাইবে না, তাহা নিশ্চিত করিয়া বলা যায় না। এমতাবস্থায় গণচীনের ‘এক সন্তান নীতি’র মতো জবরদস্তিমূলক নীতি আমরা সমর্থন করিতে পারিব না, তবে ‘ছেলে হউক মেয়ে হউক এক দম্পতির দুই সন্তানের বেশি নহে’—এই ধরনের প্রণোদনামূলক কার্যক্রমকে আমরা অগ্রাধিকার দিতে পারি। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী করিয়া তুলিতে পারি সহজলভ্য। এই ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও আদর্শস্থানীয় হইতে পারে।