সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) বাজার হইতে ৪৭টি কীটনাশক ও সারের নমুনা সংগ্রহ করিয়া একাধিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাইয়াছে। তাহাতে দেখা যায়, ৩৬টি নমুনায় ক্ষতিকর সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি ধরা পড়িয়াছে। ভুট্টা চাষে ব্যবহূত হয় এমন একটি কীটনাশকের নাম ইউনিজুম ৫০ ডব্লিউপি। এই কৃষিপণ্যের নমুনা পরীক্ষায় প্রতি কেজিতে ১২ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম সিসা ও ৩ দশমিক ৬৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পাওয়া গিয়াছে। কোনো কোনো কোম্পানির কীটনাশকে পাওয়া গিয়াছে প্রতি কেজিতে ২ দশমিক ৯০ মিলিগ্রাম সিসা ও ৮ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম। অর্থাত্, কোম্পানিভেদে সিসা ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতির হেরফের আছে; কিন্তু কীটনাশক ও সারের মধ্যে কোনো প্রকার ভারী ধাতু থাকিবারই অবকাশ নাই। এইগুলি এমন এক ক্ষতিকর উপাদান, যাহার মাধ্যমে মাটি ও পানি দূষিত হয় এবং আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলার প্রভূত ক্ষতি সাধন করিয়া থাকে। মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ইহা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ইহা ক্যানসার ও মস্তিষ্কজনিত রোগ সৃষ্টিকারী। এমনকি শিশু, গর্ভবতী নারীসহ সব মানুষের উপর ইহা সৃষ্টি করে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, বর্তমানে চার শতাধিক কোম্পানি বিভিন্ন দেশ হইতে কীটনাশক ও সার আমদানি করিয়া থাকে। কিন্তু ঠিক কত প্রকারের সার ও কীটনাশক আসিতেছে, তাহার কোনো হিসাব নাই। তাহারা শুধু লাইসেন্স দিতে পারিয়াই সন্তুষ্ট বলিয়া প্রতীয়মান হয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, তাহা তাহাদের নাই। সিসামুক্ত কীটনাশক আমদানি হইতেছে কি না, তাহা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরই নিশ্চিত করা উচিত, যেহেতু তাহারাই আমদানির ব্যাপারে কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়া থাকেন। তাহাদের নীতিতে আছে, আমদানিকৃত কীটনাশক ও সারে কোনো প্রকার ভারী ধাতু আসিবে না। তাহলে তাহা আসিতেছে কেন? এই ব্যর্থতা এই অধিদপ্তর এড়াইয়া যাইতে পারে না। তাহারা অজুহাত হিসাবে বলিতেছে, এই সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেই সকল ইকুইপমেন্ট দরকার, তাহা নাই। ইকুইপমেন্ট বা জনবলের কোনো ঘাটতি থাকিলে তাহা অবশ্যই পূরণ করিতে হইবে। সেই সঙ্গে বিশেষ করিয়া বন্দরে বন্দরে অ্যাটোমিক এনার্জি বা বিসিএসআইআরের তত্ত্বাবধানে তাহা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা যতই বাড়িতেছে, কৃষিজমি ও খাদ্য উত্পাদনের প্রতি ততই চাপ বাড়িতেছে। দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে। যেহেতু ফসল উত্পাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রতিবন্ধক ফসলের বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ, তাই জমিতে কীটনাশক ও সার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করিবার উপায় নাই। কিন্তু মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় ইহা যাহাতে মাত্রাতিরিক্ত হারে ব্যবহার না করা হয় এবং তাহাতে যেন ক্ষতিকর কোনো উপাদান না থাকে, এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করিতে হইবে। সম্ভব হইলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে জৈব সার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হইবে।