বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইটভাটা এবং পরিবেশ :উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ

আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪৩

বাংলাদেশ যেই সকল নেতিবাচক কারণে বিশ্বের সংবাদপত্রে সম্প্রতি জায়গা দখল করিতেছে, তাহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বায়ুদূষণ। বাংলাদেশে প্রধান প্রধান শহরে বায়ুদূষণের প্রধান একটি কারণ অনিয়মতান্ত্রিক ইটভাটা। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, চট্টগ্রামে ৪০৮টি ইটভাটার মধ্যে ৩১২টি-ই অবৈধ। বাকি ৯৬টি জেলা প্রশাসনের অনুমোদন লইয়া পরিচালিত হইলেও সেইগুলিতেও রহিয়াছে শুভংকরের ফাঁকি। পরিবেশ আইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি জিগজ্যাগ চিমনি রহিয়াছে মাত্র ১১৯টি ইটভাটার। উন্নত মানের অত্যাধুনিক হাইব্রিড হফম্যান কিলনধারী ভাটা রহিয়াছে মাত্র একটি এবং অটো টানেল কিলন ভাটা রহিয়াছে মাত্র দুইটি। নিয়মানুযায়ী একটি ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই ও স্থানীয় ভূমি অফিসসহ আরো কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র গ্রহণ করিতে হয়। সবগুলি ছাড়পত্র না পাইলে ইটভাটা তৈরির সুযোগ নাই। কিন্তু বাংলাদেশ বহু ক্ষেত্রেই সকল সম্ভবের দেশ। সুতরাং আমরা দেখিতে পাই, অসাধু কিছু ব্যক্তি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করিয়া ইটভাটা তৈরি করিতেছেন।

সম্প্রতি একটি জরিপের প্রতিবেদন হইতে জানা গিয়াছে, সারা দেশের ইটভাটাগুলির তিনটির একটি অবৈধভাবে পরিচালিত হইতেছে। এইগুলির পরিবেশগত ছাড়পত্র যেমন নাই, তেমনি নাই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিও। সারা দেশে এমন ইটভাটার সংখ্যা তিন সহস াধিক। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এই সকল ইটভাটা বাংলাদেশের মারাত্মক বায়ুদূষণের বড়ো উত্স। এই কারণে বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের তালিকায় চলতি মাসের প্রায় পুরো সময়েও ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ুর শহর হিসাবে পরিচিতি পাইয়াছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ জারি করিবার সময় আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটার স্বীকৃতি প্রযুক্তি নির্ধারণ করা হইয়াছিল। ইহার ফলে কিছু ইটভাটার মালিক পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে ভাটা স্থাপন শুরু করেন। তবে এই আইনে ‘বিশেষ স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান ও গ্রামীণ সড়ক হইতে ১ কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করিতে হইবে’—মোতাবেক ধারার কারণেও জিগজ্যাগ ভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হইতেছে না। এই ধারা লইয়া একটি গুরুতর অভিযোগ রহিয়াছে যে, ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে ইটভাটা নির্মাণ করিলে গেলে উহা উপরিউক্ত ধারায় নিষিদ্ধ স্থানে পড়িয়া থাকে। অর্থাত্ এই ধারায় বৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ এক অর্থে অসম্ভব।

মনে রাখিতে হইবে, বাংলাদেশ উন্নয়নের সিঁড়ি বাহিতেছে দ্রুতগতিতে। এই সময় নির্মাণকাজে সবস্তরে ইটের চাহিদা তৈরি হইতেছে ব্যাপক হারে। সারাদেশে সকল ইটভাটায় মোট ২০ লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হইয়া থাকে। একটি হিসাব হইতে জানা যায়, ইটশিল্প দেশের জিডিপির ১ ভাগ অবদান রাখিতেছে। সুতরাং ইটশিল্পের বিকশিত হইবার পথটি রুদ্ধ করিলে চলিবে না। তবে ইটভাটা যাহাতে পরিবেশের অসহনীয় মাত্রায় ক্ষতিসাধন করিতে না পারে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করিতে বাধ্য থাকে—সেই দিকটিও নিশ্চিত করিতে হইবে। কারণ, ইটভাটা এবং পরিবেশ উভয়কেই রক্ষা করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।