শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশ বিমান ও বিমানবন্দরের উন্নয়ন

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:০৯

আজ শনিবার বাংলাদেশ বিমানের নূতন দুইটি ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ উদ্বোধন করিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাম দুইটি চমত্কার। একটির সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অন্যটির সঙ্গে জড়িত বাউল সম্রাট লালন ফকিরের নাম। একটি কাব্যগ্রন্থের নাম, আরেকটি জনপ্রিয় গানের কলির অংশ। ২৯৮ আসনের এই দুইটি বোয়িং আগামী ৫ জানুয়ারিতে লন্ডন ও ম্যানচেস্টারের রুটে ডানা মেলিবে। নিঃসন্দেহে বিমানবহরে এই নূতন সংযোজনা এই সংস্থার উন্নয়নের নির্দেশক। একই দিন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজও উদ্বোধন করিবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশি-বিদেশি নাগরিকদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হইতেছে। তিনতলার এই টার্মিনাল ভবনের আয়তন হইবে ২ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গমিটার, লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়ায় ২০০ মিটার। বিমানবন্দর একটা দেশের ড্রয়িংরুমের মতো।

একটা দেশে প্রবেশের পূর্বে বিদেশিরা বিমানবন্দর দেখিয়াই সেই দেশ সম্পর্কে প্রথমে ধারণা গ্রহণ করেন। এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পদক্ষেপকেই আমরা স্বাগত জানাই। নূতন টার্মিনাল নির্মাণ ও নূতন বোয়িং চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের রুটসংখ্যাও বাড়িতেছে। এইবার অত্যাধুনিক বহর নিয়া বাংলাদেশ বিমান নূতন আরো ১২টি গন্তব্যে ছুটিয়া চলিবে। বর্তমানে বিমানের আন্তর্জাতিক ১৫টি রুটের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত, দাম্মাম, দোহা, মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা, আবুধাবি, দুবাই ও মাস্কাটে ফ্লাইট রহিয়াছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর এবং স্বল্প দূরত্বে কলকাতা ও কাঠমান্ডুতে ফ্লাইট চালাইতেছে বিমান। ইহার বাহিরে ইউরোপে কেবল লন্ডন রুটে রহিয়াছে ফ্লাইট। এখন ইহার সহিত যোগ হইতেছে নূতন রুট যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার। ইহা ছাড়া চীনের গুয়াংজু, ভারতের চেন্নাই, মালদ্বীপের মালে, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, কানাডার টরন্টো, জাপানের টোকিও, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, ইতালির রোম ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রহিয়াছে। ইহার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান নূতনভাবে উজ্জীবিত হইবে বলিয়া আমরা আশা রাখি। তবে এইজন্য মার্কেট সার্ভে সঠিকভাবে করিতে হইবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হইবে, যাহাতে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি নূতন করিয়া লোকসানের মুখে না পড়ে।

বর্তমান যুগকে বলা হয় প্রতিযোগিতার যুগ। এইজন্য বাংলাদেশ বিমানকে লাভের মুখ দেখিতে হইলে এবং সগৌরবে টিকিয়া থাকিতে হইলে সার্ভিস বা সেবার মান বাড়াইতে হইবে। বাড়াইতে হইবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এফিয়েন্সি বা দক্ষতা। আশার কথা হইল, থার্ড টার্মিনাল হইবে অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত একটি স্বপ্নের প্রকল্প। ইহাতে থাকিবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ৩৬টি পার্কিং বে, বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার। থাকিবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার। এই টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়ালসেতু নির্মাণ করা হইবে যাহার মাধ্যমে মেট্রো রেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগ ব্যবস্থা থাকিবে। ফলে আমরা আশা করি এই থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হইবে। তবে দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরও অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন প্রয়োজন। মশা-মাছির উত্পাত বন্ধসহ বিমানবন্দরের পরিবেশ সার্বিকভাবে পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে। বাড়াইতে হইবে ইমিগ্রেশন ডেস্ক, যাহাতে সেবাগ্রহীতাদের অধিকক্ষণ লাইনে দাঁড়াইয়া থাকিতে না হয়। লাগেজ চুরি বা হারাইয়া যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকিতে হইবে।