শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে

আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:০৫

রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘনের দায়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সদ্য গৃহীত প্রস্তাবনাটির প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাহা বলিয়াছে তাহা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন ব্যতীত অন্য কিছু নহে। ১৩৪-৯ ভোটে পাশ হওয়া প্রস্তাবনাটিকে মিয়ানমার মানবাধিকারের ‘বৈষম্যমূলক’ ব্যবহার হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছে। জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবনাটির পরিণতিতে মিয়ানমারে নূতন করিয়া ‘আস্থাহীনতা’ ও ‘মেরুকরণের’ বীজ রোপিত হইবে বলিয়াও দাবি করিয়াছে দেশটি। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্বিচার গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ ও বন্দি অবস্থায় প্রাণহানির দায়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হইয়াছে।

মিয়ানমারের দিক হইতে প্রত্যাখ্যান আসিবে তাহা জানা কথা। কয়েক সপ্তাহ পূর্বে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাবিষয়ক মামলা উঠিবার পর হইতে একই ভাষায় কথা বলিয়া আসিতেছে দেশটি। রাষ্ট্রক্ষমতার মূল কর্তৃপক্ষ অর্থাত্ সামরিক বাহিনীর নির্দেশনা এবং সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মৌলবাদীদের মন রাখিবার লক্ষ্যে মিয়ানমারের প্রধান রাজনৈতিক নেতা অং সান সু চিও একের পর এক অসত্য ভাষণ দিয়া চলিয়াছেন। হায়! নোবেল শান্তি পুরস্কারের এত বড়ো অবমাননা আর কখনোই ঘটে নাই। রোহিঙ্গাদিগকে ‘বাঙালি’ হিসাবে চিহ্নিত করিয়া নির্যাতনের প্রাথমিক ভিত্তিটি নির্মাণ করা হইয়াছে। ইহার সহিত ধর্মগতভাবে অধিকাংশ রোহিঙ্গার ‘মুসলিম’ পরিচয়টিও যে নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হইয়াছে তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। নির্যাতনের বৈধতা দান করিবার লক্ষ্যে ইহার সহিত আবার ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটিকে সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা হইতেছে। মিয়ানমারের বক্তব্য শুনিলে মনে হইবে যে, ১ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা যাহারা বাংলাদেশে আশ্রয় লইতে বাধ্য হইয়াছে তাহারা সকলেই সন্ত্রাসী। কোনো সন্দেহ নাই যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুগপত্ শারীরিক-মানসিক ও তথ্য-সন্ত্রাসে লিপ্ত হইয়াছে। ভাবিতে অবাক লাগে মিয়ানমারে বুদ্ধিজীবী কিংবা সুশীল সমাজ বলিয়া কোনো কিছুর অস্তিত্ব রহিয়াছে কি? থাকিলে তাহাদের কোনো বক্তব্য এখন অবধি শোনা যাইতেছে কি? রাষ্ট্র নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায় করিতেছে এই প্রমাণ ভূরিভূরি; কিন্তু সেই সমস্ত দেশেও বুদ্ধিজীবী-সুশীল সমাজের মানুষকে দুর্বল কণ্ঠে হইলেও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করিতে দেখা যায়। এইভাবে দেখিলে মিয়ানমার একান্ত ব্যতিক্রম।

ইহা স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি প্রভাবশালী একাধিক দেশের নানামুখী হিসাব-নিকাশের মধ্যে পড়িয়া গিয়াছে। এইসব সমীকরণ কবে কেমন করিয়া সমাধান হইবে? রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সর্বোচ্চ মানবতা প্রদর্শন করিতেছে। ইহার সহিত এই কথাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিবেচনায় রাখিতে হইবে যে, নানাবিধ কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাবিরোধী একধরনের মনোভাব ক্রমশ বাড়িতেছে। দিনেকালে ইহা কোনদিকে যাইবে তাহা কেহ বলিতে পারে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইহাও বুঝিতে হইবে যে, মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতারও একটি মাত্রা আছে।