শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আসিবে কি স্বস্তিময় সময়?

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:১৪

উনিশের আজ শেষ দিন। কেমন কাটিল বিগত বত্সরখানি? কুড়ির নূতন দিনে স্বস্তিময় সময় আসিবে কি? তেমন স্বপ্ন দেখিবার রসদ কি তৈরি হইয়াছিল উনিশের গর্ভে? সময় তো একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারা। উনিশের ব্যাটন হাতেই তো আমাদের ছুটিতে হইবে কুড়ির দিকে। সুতরাং উনিশের তৈরি বৈশ্বিক পরিবেশের প্রভাব তো আমাদের উপর থাকিবেই।

প্রকৃতপক্ষে পরাশক্তিদের শীতল মস্তিষ্কে যাহা তৈরি হয়, তাহারই প্রয়োগ ঘটে বিশ্ব জুড়িয়া। পরাশক্তিদের সবচাইতে বড়ো সাইনবোর্ড ‘বিশ্বে শান্তি আনয়ন’। যদিও তথাকথিত সেই ‘শান্তি’র সাইনবোর্ড পৃথিবীতে কত বেশি অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করিয়াছে—তাহা লইয়া বিস্তর গবেষণা করা যায়। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, বিশেষ করিয়া স্নায়ুযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর হইতে বিশ্ব রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে জটিল সব পটপরিবর্তন হইয়াছে। একবিংশের শুরুতে নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর বিশ্বরাজনীতি অর্থনীতির উপর নির্ভরশীলতা হইতে সরিয়া আসিয়া অনেকটাই নিরাপত্তার দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে। অতঃপর আমরা দেখিয়াছি মধ্যপ্রাচ্যকে আরো অস্থির করিয়া তোলা হইয়াছে। বিভিন্ন আদলে সেই ধারা অব্যাহত ছিল বিগত বত্সরেও। দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার মধ্য দিয়া মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে ভাঙনের শব্দ আরো তীব্রতর হইয়াছে। ইহার ভিতরেই আমরা দেখিয়াছি, ন্যাটোকে কেন্দ্র করিয়া ইউরোপের সহিত যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন—যাহা বৃদ্ধি পাইয়াছে বিগত বত্সরে। উনিশের আরো একটি তাত্পর্যপূর্ণ লক্ষণ হইল বিশ্ব অর্থনীতি। অনেকটাই মন্দাবস্থার মধ্যে রহিয়াছে শক্তিশালী পশ্চিমা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি। এই মন্দগতি ক্ষণিকের নাকি দীর্ঘস্থায়ী—তাহা লইয়া অর্থনীতির বিশ্লেষকদের মধ্যে মতপার্থক্য রহিয়াছে। অনেকের মতে, আগামী পাঁচ বত্সর ধরিয়া চলিবে মন্দার এই ধাক্কা। তাহাদের মতে, চীন এবং আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই পড়িয়াছে। অন্যদিকে ব্রেক্সিট হইতে ব্রিটেনের বাহির হইয়া আসিবার বিশেষ প্রভাব পড়িবে ইউরোপের অর্থনীতিতে। তবে এই মন্দার মধ্যেও বর্তমানে বিশ্বের জিডিপি বৃদ্ধির হারে বিগত বত্সরেও আমেরিকার অবদান সবচাইতে বেশি, ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চীন—তাহাদের অবদান ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। ইহার পরে রহিয়াছে জাপান ও জার্মানি। তবে চাপে থাকিবে উন্নয়শীল বিশ্ব। কারণ, আইএমএফ জানাইয়াছে, বিগত বত্সরে সারা বিশ্বে ঋণের অঙ্ক ১৮৮ লক্ষ কোটি ডলার ছুঁইয়াছে। অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ তথ্য হইল—এই পরিমাণ ঋণ বিশ্ব অর্থনীতির ২৩০ শতাংশ। বিগত বত্সরের মতোই আসন্ন বত্সরটিকেও নিয়ন্ত্রণ করিবে বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনীতি। নূতন বত্সরে মানুষ নূতন করিয়া স্বপ্ন দেখিতে ভালোবাসে। বিগত বত্সরে যাহা পাওয়া যায় নাই নূতন বত্সরটিতে সেই ইচ্ছা পূরণ হইবে—এমন স্বপ্ন উজ্জীবিত রাখে মানুষকে।

বিশ্বের প্রায় নব্বইটি দেশ কমবেশি অশান্ত ছিল বিগত বত্সরে। ভূরাজনৈতিক বিশ্বের জটিল সমীকরণের বাহিরে নহে বাংলাদেশ। আমরা আশা করিব, উনিশের ব্যাটনখানির মধ্যে যেই নৈরাশ্য, নৈরাজ্য, দুর্ভোগ, যাতনা ও অশান্তির ছাপ রহিয়াছে—তাহা বহুলাংশে প্রশমিত হইবে আসন্ন নূতন বত্সরখানিতে।