শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাম অয়েল যায় কোথায়!

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ২২:০৭

সয়াবিন তৈল এবং পাম অয়েল বা পামজাত তৈল একই দ্রব্য নহে। সয়াবিন ভোজ্য তৈল উত্পন্ন হইয়া থাকে সয়া শিম বা বীজ হইতে, যাহার বৈজ্ঞানিক নাম গ্লাইসন ম্যাক্স; আর পাম অয়েল উত্পন্ন হইয়া থাকে পাম নামের গাছ হইতে, যাহার বৈজ্ঞানিক নাম এলাইস গিনিসিস। দুইটি ভোজ্য তৈলেরই গুণগত পার্থক্য রহিয়াছে। এই দুইটি উত্পন্ন ভোজ্য তৈলের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে রহিয়াছে ব্যবধান। বাংলাদেশে বাজারে ভোজ্য তৈল হিসাবে সয়াবিন তেলের চাহিদা রহিয়াছে ব্যাপক। কিন্তু পাম অয়েলের জনপ্রিয়তা নাই। সয়াবিন তৈলে যে সুসিক্ত ফ্যাট রহিয়াছে তাহা পাম অয়েলের চাইতে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এই মানুষের চাহিদার সুযোগ লইয়া এক ধরনের ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে এক চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত রহিয়াছে, যা দেখিবার কেহ নাই বলিয়াই মনে হয়! বাংলাদেশ সর্বাধিক পরিমাণ সয়াবিন এবং পাম অয়েল আমদানি করিয়া থাকে মালয়েশিয়া এবং আর্জেন্টিনা হইতে। মালয়েশিয়া পাম অয়েল কাউন্সিলের হিসাব হইতে দেখা যায় বাংলাদেশের ব্যসায়ীরা ২০১৮-১৯ সালে মালয়েশিয়া হইতে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাম অয়েল আমদানি করিয়াছেন। হিসাব হইতে আরো দেখা যায় দেখা যায় বাংলাদেশে গত ২০ বছরে কখনোই পাম অয়েলের চাইতে সয়াবিন তৈল অধিক আমদানি করা হয় নাই। অথচ বাজারে কোনো পাম অয়েল নাই! সবই সয়াবিন অয়েল। ইহার মাজেজা কী তাহা বুঝা খুব দুরূহ নহে। পাম অয়েল বন্দরে ভিড়িয়া প্রবেশ করে তাহার পর বেড়াইতে যায় রিফাইনারিতে। বাহির হইয়া আসে খাঁটি সয়াবিন তৈল হইয়া! তাই যথার্থই বলিয়াছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউশনের মহাপরিচালক। তিনি মন্তব্য করিয়াছেন, ‘আমরা বাজার হইতে যেই সয়াবিন তৈল ক্রয় করি তা আদৌ সয়াবিন কি না ভাবিতে হইবে।’ তাহার এই ভাবনা বাংলাদেশের সচেতন মানুষ মাত্রই বাতিল করিয়া দিয়া বলিবেন, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন, উহা সয়াবিন তৈল নহে!’

প্রশ্ন উঠিতে পারে, জনগণ উহা ক্রয় করে কেন, প্রতিবাদই-বা করে না কেন? প্রথমত দেশের সাধারণ জনগণ সচেতন নহে। এই অসচেতনতা প্রায় সর্বক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। দ্বিতীয়ত ব্যক্তির ঘাড়ে কয়টা মাথা যে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক কোনো কোম্পানি বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইবে? পাম অয়েল যাহাতে সয়াবিন তৈল হিসাবে পরিচিতি লাভ না করিতে পারে তাহা দেখিবার জন্য সরকারের কয়েকটি পরিদপ্তর, অধিদপ্তর রহিয়াছে। সরকারের বেতনভুক্ত হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রহিয়াছেন। তাহারা কী করেন? সরকারের ইহা মনে রাখা উচিত, যেইখানে নীতি-নৈতিকতার বালাই নাই, সেইখানে আইন প্রয়োগ না করিতে পারিলে জাতি নিঃশেষ হইয়া যাইবার আশঙ্কা তৈরি হয়। অন্যদিকে কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে প্রশ্ন থাকে, পাম অয়েলকে পাম অয়েল এবং সয়াবিনকে সয়াবিন বলিয়া বিক্রয় করিতে সমস্যা কী? লাভ কম হইবে? হউক না লাভ কম। অধিক মুনাফার অর্থ সঙ্গে লইয়া তো পৃথিবী হইতে বিদায় লইতে পারিবেন না!