বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অধিগ্রহণের জমিও বেহাত হইতেছে

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৫২

সরকারি-বেসরকারি ভূমি দখল, একের জমি অন্যের বিক্রয় করিয়া দেওয়ার চিত্র দেশে নূতন নহে। খাসজমির বেলায় তো কথাই নাই। কিন্তু এখন দেখা যাইতেছে শুধু খাসজমি বা জলা নহে, কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীন জমিই শুধু নহেসরকারের প্রয়োজনে অধিগ্রহণকৃত জমিও এক ব্যক্তি মালিক সাজিয়া অন্যের নিকট বিক্রয় করিয়া দিতেছেন। আবার তিনি বিক্রি করিতেছেন অন্যের কাছে। অথচ নির্বিকার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড নিরুত্সাহিত করিতে সরকার ১৯৭০ সালের ভূমি স্থাপনা দখল পুনরুদ্ধার আইন সংশোধন করিয়া শাস্তির মাত্রাও বৃদ্ধি করিয়াছে। কিন্তু কে শুনিবে কাহার কথা, যদি দায়িত্বরত সরকারি-কর্মচারীগণ নিজ দায়িত্বের খেলাপ করিয়া থাকেন? আর সে কারণেই এই দখল প্রবণতা কমে তো নাই-, বরং বৃদ্ধি পাইয়াছে। খোদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদন হইতে জানা গিয়াছে, গাজীপুরের জয়দেবপুর হইতে দেবপুর-ভুলতা-মদনপুর সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনে সড়ক জনপদ অধিদপ্তর ৪৭ দশমিক ৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করিয়াছে। অধিগ্রহণের গ্যাজেটও প্রকাশ করা হইয়াছে। ওই জমি ব্যবহারের পর দেখা যাউতেছে দুইটি খতিয়ানে ২০০ শতক এবং একটি দাগে ৬০ শতক জমি অব্যবহূত রহিয়া গিয়াছে। কিন্তু সেই জমি ব্যক্তির নামে নামজারি করায় তাহা এখন আর সড়ক জনপদের আছে বলিয়া দাবি করিবার অবকাশ নাই। অর্থাত্ বেহাত হইয়া গিয়াছে! এইরূপ বিশৃঙ্খলতা কেন ঘটিতেছে তাহা কাহারও অজানা নহে। প্রথমত, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এই জমি সময়মতো নামজারি করা হয় নাই। তাহারা হয়তো সরকারের শক্তির কথা ভাবিয়াছেন, কিন্তু নিয়মের কথা ভাবেন নাই। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যেই সকল লোক সরকারের জমি তথা সম্পদ আত্মসাত্ করিতেছে, লুটিয়া লইতেছে, তাহার পিছনে রহিয়াছে সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সাধারণত আর্থিকভাবে লাভবান হইবার মাধ্যমে এইসব লোকই পথ বাতলাইয়া থাকেন যে, কী করিয়া ওই সম্পদ বেদখল করিতে হইবে! সড়ক জনপদের নামে ওই জমি নামজারি করিবার দায়িত্ব স্থানীয় এসি ল্যান্ড এবং জেলা প্রশাসনের। গ্যাজেট প্রকাশের ৯০ দিনের ভিতর সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে নামজারি করিয়া তাহা ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ওই সংস্থাকে অবহিত করিবার পরিষ্কার বিধান রহিয়াছে। তাহা কেন করা হয় নাই, উহার জবাব আমরা কাহার কাছে চাহিব (অথবা চাহিতে পারিব কি!)? আমরা খাসজমি বন্দোবস্ত লইয়াও অনেক অসঙ্গতি দেখিতে পাই। অথচ এইসব বিষয়ে দেশের ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাঠপর্যায়ে কর্মপন্থা জমি সুনির্দিষ্টকরণসহ  বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া রহিয়াছে। 

এই যে ভূমি লইয়া দেশে পাহাড়সম অসঙ্গতি-অনিয়ম রহিয়াছে, ইহা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে যে, আমরা ইহার কোনো সমাধান দিতে পারিতেছি না। কিন্তু একটি সমাধানে তো আসিতে হইবে! সরকারের মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও ওই জমি কী করিয়া একাধিকবার মালিকানা বদল হইল? কেন সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট সংস্থার নামে নামজারি করা হইল না এইসব বিষয় খতিয়া দেখিবার এবং ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।