শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুতিনের নূতন রাজনীতি রাশিয়ায়

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৪৬

কোনো রকমের আভাস প্রদান ব্যতিরেকে সরকার ভাঙিয়া দিয়া সকল মহলকে চমকাইয়া দিয়াছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ থাকিলেও, সারা জীবনের মতো ক্ষমতা পাকাপোক্ত করিবার পরিকল্পনায় তাড়িত হইয়া এইবার অনেক সময় হাতে লইয়াই কর্মকৌশল শুরু করিয়াছেন পুতিন।

পুতিনের নূতন পরিকল্পনার প্রথম দৃশ্যমান শিকার হইয়াছেন দিমিত্রি মেদভেদভ। তিনি শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী পদ হইতে সরিয়া গিয়াছেন। তাহাকে প্রস্তাবিত জাতীয় কাউন্সিলে স্থান দেওয়া হইবে বলিয়া জানানো হইয়াছে। মেদভেদভকে অবশ্য ইতিপূর্বেও শিখণ্ডী হিসাবে ব্যবহার করিয়াছিলেন পুতিন। ২০০৮ সালে দুই মেয়াদ অন্তে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়িবার বাধ্যবাধকতার মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন পুতিন। তখন এই মেদভেদভকেই সাক্ষীগোপাল প্রেসিডেন্ট বানাইয়াছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে সরানো এবং সরকার ভাঙিয়া দেওয়া ছাড়াও, ভবিষ্যতে জনমত প্রাপ্তিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপ্রধানশাসিত সরকারের স্থলে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করিবার আভাস দিয়াছেন পুতিন। ‘জনগণের নিকট অধিক ক্ষমতা হস্তান্তরের’ অজুহাত দেখানো হইলেও এই ক্ষেত্রে মূলত অন্য উদ্দেশ্য আছে বলিয়া মনে করা হইতেছে। ধারণা করা হইতেছে যে, আগামী বত্সরে অনুষ্ঠিতব্য সংসদীয় নির্বাচনে পুতিনের প্রভাবাধীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির খারাপ ফলের আশঙ্কা হইতে প্রধানমন্ত্রী পদে নূতন মুখ এবং সংসদকে শক্তিশালী করিবার ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে। উল্লেখ্য, মেদভেদভ হইতেছেন এই দলের নামেমাত্র প্রধান। সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের জনপ্রিয়তা অনেকখানি কমিয়া আসা ও অর্থনীতিতে খারাপ পরিস্থিতি হইতে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাইয়া দিতেও সর্বশেষ ঘোষণাটি যে কিছুটা কাজে লাগিবে তাহা বলাই বাহুল্য। তবে এই বিষয়ে পর্যবেক্ষক মহল মোটামুটি একমত যে, ক্ষণস্থায়ী লাভ তুলিয়া নেওয়া নয় বরং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখিয়াই নূতন এই জাল বিস্তার করিয়াছেন পুতিন। এই ক্ষেত্রে দুইটি সম্ভাবনা রহিয়াছে। এমন হইতে পারে যে, পুতিন পুনরায় প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণ করিবেন এবং সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা না রাখিয়া যতবার খুশি এই পদটি অলংকৃত করিতে থাকিবেন। এই ক্ষেত্রে তিনি মহাশক্তিমান প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে সর্বময় ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাশিয়া শাসন করিবেন। তবে এমনও হইতে পারে যে, প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকিয়াও সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী থাকিবার পথ খুঁজিয়া লইতে পারেন তিনি। সেই ক্ষেত্রে তিনি সম্ভবত সদ্য ঘোষিত নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান পদে বসিয়া প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট পদের কলকবজা নাড়াইবেন।

এত কায়দাকৌশল না করিয়া সোজা সংবিধান সংশোধন করিয়া অনেকটা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মতো করিয়া প্রেসিডেন্ট পদ চিরস্থায়ী করিয়া ফেলিবার পথে হাঁটিতেছেন না কেন পুতিন? ধারণা করা যায় যে, দেশের ভিতরে এবং বিশেষ করিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনাবিদ্ধ না হইতে চাহিবার কারণেই জটিল পথে হাঁটিতেছেন পুতিন। বস্তুত পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছে যে, রাশিয়া ও পুতিন—এই নাম দুইটির মধ্যে কোনো পার্থক্য চিহ্নিত করাও কঠিন হইয়া পড়িয়াছে।