শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবার কি সিরীয় শরণার্থীর ঢল নামিবে?

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৪৮

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে সরকারি বাহিনীর প্রচণ্ড হামলার জেরে নতুন করিয়া সিরীয় শরণার্থীর ঢল নামিবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। সরকারবিরোধীদের দখলে থাকা সর্বশেষ এই অঞ্চলটিতে গত ডিসেম্বরে অভিযান শুরু হইলেও, চলতি মাসে তাহা চরমে উঠিয়াছে। প্রাণ বাঁচাইবার তাগিদে ইতিমধ্যে ৩০ লক্ষের মতো মানুষ নিকটবর্তী তুরস্ক সীমান্তের দিকে চলিয়া গিয়াছে বলিয়া সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাইতেছে। হামলা না থামিলে সামনের দিনগুলিতে এই সংখ্যা বাড়িতে থাকিবে বলিয়া ধরিয়া লওয়া হইতেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলি, রাশিয়া ও তুরস্ক ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করিয়াছে।

নতুন করিয়া সিরীয় শরণার্থী ঢুকিয়া পড়িবার আশঙ্কায় স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিয়াছে তুরস্ক। উল্লেখ্য, দেশটিতে ইতোমধ্যে সাড়ে ৩০ লক্ষের অধিক সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করিতেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলে, সীমান্ত খুলিয়া দিয়া সিরীয় শরণার্থীদের ইউরোপে ঢুকিয়া পড়িবার রাস্তা করিয়া দেওয়ার হুমকি দিয়াছে দেশটি। ইদলিবের হামলাতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা দেওয়ার কারণে রাশিয়ার উপরেও ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে তুরস্ক। বেশ কিছুদিন ধরিয়া রাশিয়ার সহিত উত্তরোত্তর সম্পর্কোন্নয়ন ঘটিতে থাকিলেও, ইদলিব অভিযান ঘিরিয়া সম্পর্কের অবনতি ঘটিতে শুরু করিয়াছে। এইদিকে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ মদত দানের পিছনে রাশিয়ার হিসাবটি স্পষ্ট। গৃহযুদ্ধের শুরু হইতে সিরিয়া সরকারের পক্ষেই রহিয়াছে রাশিয়া। বিশ্লেষকেরা মনে করিতেছেন যে, ইদলিবের পতন ঘটাইয়া গোটা দেশের উপরে সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলির বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে এক ধাপ আগাইয়া যাইতে চাহিতেছে রাশিয়া। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দূরে সরিয়া থাকিলেও পশ্চিমারা দীর্ঘদিন ধরিয়া সিরিয়ার বিদ্রোহী পক্ষগুলিকে নানান রকমের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করিয়াছে। সিরিয়াতে নতুন করিয়া মানব বিপর্যয়ের ঘটনায় সর্বাপেক্ষা ভাবিত হইয়া উঠিয়াছে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি। ২০১৫ সালের গৃহযুদ্ধের শুরু হইতে এই পর্যন্ত প্রায় ৭ মিলিয়ন সিরীয় শরণার্থীর জীবন বাছিয়া লইতে বাধ্য হইয়াছে। ইহার মধ্যে বেশ বড়ো একটি অংশ ঢুকিয়াছে ইউরোপে। সিরীয় শরণার্থী প্রবেশের ঘটনায় ইউরোপের কয়েকটি দেশের রাজনীতিতে বড়ো ধরনের প্রভাবও পড়িয়াছে। বিশেষ করিয়া, এই ঘটনার জেরে ১ মিলিয়নের অধিক সিরীয় শরণার্থী গ্রহণকারী দেশ জার্মানির দীর্ঘকালীন চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের রাজনৈতিক জীবন বলিতে গেলে বর্তমানে অনেকটাই ফুরাইয়া আসিয়াছে। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা শরণার্থীদিগকে সকল দিক হইতে নেতিবাচক হিসাবে চিহ্নিত করিবার রাজনীতিতে ব্যাপক সাফল্য পাইতেছে। জার্মানির কাছাকাছি ঘটনা ঘটিয়াছে ইতালিতে। শরণার্থী-অভিবাসী প্রচারণা চালাইয়া নব্য ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতায় আসিয়াছে। ব্রিটেনে ব্রেক্সিটের রাজনীতিতে শরণার্থী-অভিবাসী প্রচারণার প্রভাব স্পষ্ট দেখা গিয়াছে।

নতুন করিয়া ইউরোপ অভিমুখে সিরীয় শরণার্থীর ঢল নামিলে ইউরোপের উদারপন্থার রাজনীতি আরো একবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়িয়া যাইবার আশঙ্কা করা হইতেছে। কেননা, আদর্শগত কারণে শরণার্থী গ্রহণের পক্ষে থাকিবার অর্থ হইতেছে নতুন করিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদীদের প্রচারণার শিকার হওয়া। আবার এই ইস্যুতে চুপ থাকিবার অর্থ হইতেছে মানবাধিকার অগ্রাহ্য করা। পরিস্থিতি কোন দিকে যাইবে তাহা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হইয়া উঠিবে বলিয়া মনে হইতেছে।