বগুড়ার ধুনট-শেরপুর পাকা সড়কের মাঠপাড়া গ্রামে গাড়ামারা খালের বেইলি ব্রিজটি গত মঙ্গলবার বালুবোঝাই একটি ট্রাক চলাচলের সময় ভাঙিয়া পড়ে। ইহাতে কেহ হতাহত না হইলেও বেইলি ব্রিজটি দ্বিখণ্ডিত হইয়া গিয়াছে। ফলে বন্ধ হইয়া গিয়াছে সারাদেশের সহিত এই উপজেলার সকল প্রকার যানবাহন চলাচল। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি এখনো পানির নিচেই রহিয়াছে। ইহা লইয়া এই বেইলি ব্রিজটি বত্সরে ১২ বার ভাঙিয়া পড়িল। অর্থাত্ প্রতি মাসে গড়ে একবার করিয়া ভাঙিয়া পড়িয়াছে এই ব্রিজটি। স্বভাবত প্রশ্ন আসে, এমন জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজটির স্থলে নূতন করিয়া কংক্রিটের স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হইতেছে না কেন? এই ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাগণ কি সচেতন ও দায়িত্বশীল নহেন? ১৯৯২ সালে আরসিসি পিলারের উপর নির্মিত ৬২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটির ট্রানজাম ও স্টিল টেকিং (পাটাতন) নষ্ট হইয়া পড়িয়াছে। ইহার কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বারবার জোড়াতালি দিয়া সেতুটির মেরামত করেন। এমন ব্রিজের উপর দিয়া পাঁচ টনের বেশি মালামাল নিয়া যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ; কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিয়া আলোচ্য ট্রাকটি বহন করিতেছিল ২৫ টনের বেশি বালু!
এইখানে দুইটি বিষয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দেশের অধিকাংশ বেইলি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হইলেও তাহাতে মাত্রাতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করিয়া বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করিতেছে, যাহা দেখার কেহ নাই। দ্বিতীয়ত, বেইলি ব্রিজ তৈরি করা হয় অস্থায়ী ভিত্তিতে; কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বাড়িলেও অনেক স্থানের বেইলি ব্রিজগুলি যথাযথ সংস্কার করা হইতেছে না বা তদস্থলে পাকা ব্রিজ নির্মিত হইতেছে না। আমরা জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে এই ধরনের ব্রিজের প্রচলন হয়। ইহার মডেল তৈরি করেন ব্রিটিশ কর্মকর্তা ডোনাল্ড বেইলি এবং তাহার নামেই এই ধরনের ব্রিজের নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় বহু স্থানে ভাঙিয়া যাওয়া সেতু-কালভার্টের স্থলে ব্যাপকহারে বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হয় সাময়িক যোগাযোগের জন্য। একসময় জাপান ও ভারতের সহায়তায়ও এই দেশে বেইলি ব্রিজ নির্মিত হইতে থাকে। উদ্দেশ্য ছিল ত্বরিত, জরুরি যোগাযোগ তৈরি করা। ইহা আসলে ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। পাঁচ বত্সর পরপর ইহা সংস্কারের নিয়ম থাকিলেও তাহা ঠিকমতো করা হয় না। তদুপরি ব্রিজের পাটাতন-প্লেট চুরির মতো অবিবেচনামূলক কর্মকাণ্ডও রহিয়াছে।
এক পরিসংখ্যান মতে, সারাদেশে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ রহিয়াছে চার সহস্রাধিক। তবে এই সকল ব্রিজ এখন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক। বেইলি ব্রিজে রাত্রিকালীন যানবাহন চলাচলের সময় যেই শব্দ হয় তাহাও বিরক্তিকর। এই জন্য প্রধানমন্ত্রী কয়েক বত্সর পূর্বে বেইলি ব্রিজগুলির স্থলে পাকা ও স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দিয়াছেন। ইহা একবারে করা সম্ভব নহে, পর্যায়ক্রমে এই ধরনের প্রকল্প বৃদ্ধি ও ইহার কাজ দ্রুত আগাইয়া নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত স্টিলের তৈরি হালকা ব্রিজ অধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ বিধায় এইগুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কংক্রিটের ব্রিজে রূপান্তর করা জরুরি। আলোচ্য ব্রিজটির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য।