শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা ভাইরাস :আশঙ্কা ও গুজব

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৩৯

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চীনে সামান্য হইলেও কমিয়াছে। যদিও অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা এখনো বিদ্যমান। বিশ্ব অর্থনীতিতে সক্ষম হইয়া উঠা চীন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করিতেছে। চিকিত্সকরা ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছেন। দেশটির সরকার কোথাও কোনো ত্রুটি রাখিতেছে না। চীনের বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আপাতত বন্ধ হইবার উপক্রম হইলেও চীনের সরকারপ্রধান করণীয় হিসাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া চলিয়াছে; কিন্তু বড়ো আশঙ্কার বিষয় হইল, বিশাল এই জনসংখ্যার দেশটি হইতে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ বিভিন্ন দেশে ছড়াইয়া পড়িতে শুরু করিয়াছে। ইহার মধ্যে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, ইরানসহ ১৬টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত এক বা একাধিক রোগী পাওয়া গিয়াছে। এমনকি নির্জন এবং বরফাচ্ছাদিত রাশিয়ার সাইবেরিয়াতেও একজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়াছে। চীনের বাহিরে বিভিন্ন সংক্রমিত হইবার হার এখনো খুবই কম হইলেও ফিলিপাইনস, জাপান, থাইল্যান্ড হংকং, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করিয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছে। সর্বশেষ জাপানে পৃথক করিয়া রাখা ভ্রমণতরি ডায়মন্ড প্রিন্সেসে দুই জন এবং ইরানে দুই জন মৃত্যুবরণ করিয়াছে। ঐ জাহাজে এখন পর্যন্ত ৬২১ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হইয়াছে। আরো আশঙ্কার বিষয় হইল, এই ভাইরাসের পরীক্ষায় পূর্বে নেগেটিভ অর্থাত্ ভাইরাস নাই, এমন ব্যক্তিও মারা গিয়াছে। ইহার অর্থ ভাইরাস পরীক্ষা সর্বদা কার্যকর ফলাফল নাও দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বড়ো উদ্বেগের বিষয় হইল, উন্নয়নশীল দেশে সংক্রমণ শুরু হইলে কী হইবে? অনেকেই মনে করিতেছেন, অবস্থা মারাত্মক হবে। কারণ বাস্তবতা হইল—চীনের মতো সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার সামর্থ্য উন্নয়নশীল দেশগুলির নাই। দ্বিতীয়ত, উন্নয়নশীল দেশগুলির অধিকাংশই অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। অধিকন্তু ভাইরাস ডিটেক্ট করার সক্ষমতা, পর্যাপ্ত রোগীর দেখভাল করার ক্ষমতাও উন্নয়নশীল দেশগুলির কম। ফলে কোনোক্রমে এই ভাইরাস এই সকল দেশে প্রবেশ করিলে ধ্বংসাত্মক অবস্থা তৈরি হইবে বলিয়াই অনুমিত হয়। এই সকল দেশে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিলে যে মৃত্যুর হারও হইবে অধিক তাহাতেও কোনো সন্দেহ নাই। অন্যদিকে ভিন্ন একটি উপসর্গও দেখা দিয়াছে। আর তাহা হইল গুজব। কেহ বলিতেছে, এই ভাইরাস চীনের ল্যাবরেটরিতে তৈরি হইয়াছে, কেহ বলিতেছে ৫ জি মোবাইল সংস্করণ হইতে ইহা ছড়ানো হইয়াছে; কিন্তু সাধারণ অসচেতন সম্প্রদায় জানে না যে, মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের ভাইরাস আর রোগের ভাইরাস এক জিনিস নহে। এমনকি চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এই গুজবের বিরুদ্ধে মুখ খুলিতে হইতেছে। করোনাবিষয়ক গুজব আন্তর্জাতিকভাবে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ইহা এখনো আমাদের কাছে অজ্ঞাত যে, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পক্ষ হইতে এই সকল গুজব ছড়ানো হইতেছে কি না; কিন্তু ইহা যে শুধুই গুজব তাহাতে কোনোই সন্দেহ নাই। তাই এই ধরনের গুজবে যেমন কর্ণপাত করা যাইবে না, তেমনি ভাইরাস প্রবেশের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে। তবে আশার কথা হইল, করোনা ভ্যাকসিন দ্রুতই বাজারে আসিবে বলিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিত্সাবিজ্ঞানীরা জানাইয়াছেন। ইহা যত দ্রুত বাজারজাত হইবে, ততই মঙ্গল।