শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইহা কীসের আলামত?

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৩৩

একের পর এক শিক্ষকদের অপমান, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করিবার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হইতেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আড়পাড়া শিবনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুলতানা রিজিয়া নাসরিন তাহারই এক শিক্ষার্থীকে শাসন করিয়াছেন। সেই অপরাধে শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বামী-স্ত্রী মিলিয়া স্কুলেরই শিশুদের সামনে পিটাইয়া শিক্ষিকার হাত ভাঙিয়া দিয়াছেন, যেই ছবি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হইয়াছে। অপরদিকে বগুড়া সদরের জাহিদুর রহমান মহিলা কলেজের শিক্ষক আলমগীর কবির দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি ক্লাসে পাঠদান করিবার সময় জনা বিশেক সন্ত্রাসী ১০-১২টি মোটরসাইকেলে চাপিয়া কলেজে প্রবেশ করিয়া শ্রেণিকক্ষেই তাহাকে মারধর করিয়া চলিয়া যায়। জানা গিয়াছে, অন্য এক শিক্ষক চার-পাঁচ মাস যাবত্ অনুপস্থিতির কারণে কলেজ অধ্যক্ষ আলমগীর কবিরকে বিনা বেতনে মৌখিকভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। ইহাই আলমগীর কবিরের উপর ঐ শিক্ষকের ক্ষিপ্ত হইবার কারণ।

কোনো শিক্ষক কোনো অপরাধ করিলে তাহার বিরুদ্ধে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানাইবার জন্য শিক্ষক সমিতি, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের কর্তারা রহিয়াছেন। কিন্তু আইন হাতে তুলিয়া নিয়া শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা কোন ঔদ্ধত্য! ইহা কীসের লক্ষণ? মনে রাখিতে হইবে, ইহা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নহে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ যাহারা করিতেছেন তাহারা রাজনৈতিক পরিচয়ে করিতেছেন। অপকর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার এমনই চিত্র ধারণ করিয়াছে, যাহা খুবই দুঃখজনক।

বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক ধীরগতি, মন্দা চলিতেছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হইয়াছে, তখন বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই পরিস্থিতি এখনো বাংলাদেশকে ছুঁইতে পারে নাই। আমরা আগামী দিনের কথা বলিতে পারি না, কিন্তু এই মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সফল বলিতেই হয়। তাহার পরও এই সকল ব্যক্তির এহেন কর্মকাণ্ড সরকারি দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়া তুলিতেছে। তাহারা সর্বত্রই দলের নাম ভাঙাইয়া, দলের পরিচয় ব্যবহার করিয়া অপকর্মে লিপ্ত হইতেছে। আমরা জানি, একটি রাজনৈতিক দলের সরকারের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকে, আছে। সকলেই উহা জ্ঞাত আছেন। সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলকে জনগণ লইয়া কাজ করিতে হয়। এই সুযোগ বা দুর্বলতা কাজে লাগাইয়া তাহারা যাহা খুশি করিয়া চলিয়াছে। তাহাদের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা, তাহারা স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের হয় অর্থের বিনিময়ে অথবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটাইয়া হাত করিয়া লইতেছে। এই অবস্থার আশু অবসান প্রয়োজন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখিতে হইবে, দুষ্ট গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল শ্রেয়। দেশের প্রতিটি এলাকায় এই ঔদ্ধত্য বন্ধ করিতে হইবে। শিক্ষকদের কাহারো কাহারো দুর্বলতা আছে বা থাকিতে পারে। কিন্তু ক্লাস রুমে ঢুকিয়া তাহাদের গায়ে হাত তুলিবার মতো অপরাধ কোনোক্রমেই মানিয়া লওয়া যায় না। রাজনৈতিক পরিচয় যাহাই হউক, যত অর্থবিত্ত-প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকুক, ইহাদের বিচারের আওতায় অবশ্যই আনিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, ইহাদের বিচারের আওতায় না আনা গেলে দেশের শিক্ষা ও সার্বিক উন্নয়ন গতিপথ হারাইবে।