শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২০, ২১:৪০

আজ ২৬ মার্চ। আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। ৫০ বত্সরে পা রাখিল স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পূর্বে তত্কালীন পাকিস্তানের দুই অংশের প্রায় ১ হাজার ৩০০ মাইল দূরেই যে কেবল অবস্থান ছিল তাহাই নহে, দুই অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্যও ছিল প্রকট। সংগ্রাম করিয়া, রক্ত দিয়া স্বাধীনতা লাভের ঠিক পূর্বে, অর্থাত্ ১৯৬৯-৭০ অর্থবত্সরে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গড় মাথাপিছু আয় ছিল ৩৩১ পাকিস্তানি রুপি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৫৩৭ রুপি। তত্কালীন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মধ্যে এই অংশে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের বসবাস হইলেও উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০-২৫ শতাংশ। এই রকম অসংখ্য বৈষম্যের মুখে একসময় দেশের স্বাধীনতা অবধারিত হইয়া উঠিয়াছিল এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়া বিজয় লাভ করিবার পর হইতে বাংলাদেশ আগাইতে শুরু করিয়াছিল। বর্তমান বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়াইয়াছে ২ হাজার ইউএস ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ, যাহা অনেক রাষ্ট্রের নিকটই ঈর্ষণীয় বলিয়া মনে হইতে পারে। আজ বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াইয়াছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু তাহাই নহে, স্কুলকলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিয়াছে অসংখ্য। চারিদিকে রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগব্যবস্থা বিস্তৃত হইয়াছে এবং তাহা হইতেছে অভূতপূর্ব গতিতে। চালু হইয়াছে, এক্সপ্রেসওয়ে, বহু ফ্লাইওভার, বিস্তৃত হইতেছে মহাসড়কগুলি। চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাইয়া গিয়াছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিশুমৃত্যুর হার এতটাই কমিয়াছে, যাহা আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অপরাপর দেশসমূহের চোখে পড়িয়াছে এবং উদাহরণ হিসাবে অনেক দেশকে উত্সাহিত করিয়াছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাইয়া ৭২ বত্সরে পৌঁছাইয়াছে। বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চলিতেছে। পাশাপাশি বেকারত্ব এখনো থাকিলেও অনেক কমাইয়া আনা সম্ভব হইয়াছে। স্বাধীনতার পূর্বে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা-প্লাবনে দেশবাসী ছিল অসহায়; কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে তৈরি হইয়াছে অসংখ্য দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র। এমনকি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঘরবাড়ি তৈরি করিয়া দেওয়ার কর্মসূচিও গ্রহণ করা হইয়াছে। সকল মিলাইয়া বিশাল কর্মযজ্ঞ চলিতেছে। ইহার সকলই সম্ভব হইয়াছে স্বাধীনতা লাভের ফলে; ইহার সকলই স্বাধীনতার সুফল। স্বাধীনতার এই অর্জনগুলি আমাদের স্বীকার করিতেই হইবে।

কিন্তু ‘তার আর পর নেই, নেই কোনো ঠিকানা’। পরের কথাটি হইল, একটি স্বাধীন দেশের জনগণের ঠিক স্বাধীন দেশের নাগরিকের মতো দায়িত্ব পালন করিতে হয়; আচার-আচরণ স্বাধীন দেশের নাগরিকের মতো হইতে হয়। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে কতটা দায়িত্বশীল হইয়াছি, কতটা নিজেদের কর্তব্য পালন করিতেছি তাহা ভাবিয়া দেখিবার বিষয়। আমাদের আরো পথ আগাইতে হইবে। উন্নয়নশীল দেশ হইতে উন্নত দেশের পথে দ্রুত পা চালাইতে হইবে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা যেন পরিকল্পনামাফিক আক্ষরিক অর্থেই উন্নত দেশে পরিণত হইতে পারি আজকের দিনে সেই প্রত্যাশা রইল। দেশ স্বাধীনে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে সকল শাহাদতবরণকারী এবং জীবিত মুক্তযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা, স্মরণ ও অভিবাদন রইল।