শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মন্দা কী, তাহা ভাবিতে হইবে

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২০, ২১:৪০

অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রনেতারা বর্তমান পরিস্থিতিতে আশঙ্কা করিতেছেন এবং সতর্ক করিতেছেন যে—যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বই একটি অর্থনৈতিক মন্দা বা রিসেশন; এমনকি দীর্ঘ অর্থনৈতিক মন্থরতা বা ডিপ্রেশনে পতিত হইতে যাইতেছে। আইএমএফ বলিয়াছে, ইতিমধ্যেই বিশ্বমন্দা শুরু হইয়াছে। সংগঠনটি পরবর্তী পরিস্থিতি লইয়া আশঙ্কা করিতেছে। চরিত্রগতভাবে একই রকম হইলেও রিসেশন এবং ডিপ্রেশনের মধ্যে সূক্ষ্ম একটি পার্থক্য রহিয়াছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের মতে, মন্দা হইতেছে জাতীয় গড় আয়, চাকুরি ও বিনিয়োগসংক্রান্ত ব্যয় উত্পাদনক্ষমতার ব্যবহার, ক্রয়ক্ষমতা, পারিবারিক আয়, বাণিজ্যিক মুনাফা স্বাভাবিকের চাইতে কমিয়া যাওয়া। ইহার সহিত মুদ্রাস্ফীতি অস্বাভাবিক হইয়া পড়ে। যে কোনো সরকারকে তখন অন্যান্য পরিকল্পনা স্থগিত রাখিয়া সাময়িকভাবে অর্থের জোগান করিতে হয়। মন্দা বা রিসেশনের চরিত্র হইল, উহা সাধারণত ছয় মাস বা তাহার অধিক সময় পর্যন্ত থাকে, যাহা অর্থনীতি ও জীবনমানের উপর চাপ বাড়াইয়া থাকে। আর অর্থনীতির গতি মন্থর হইয়া পড়া বা ডিপ্রেশন টিকিয়া থাকে দীর্ঘকাল। যেমন ১৯২৯-৩০ সালে যে ডিপ্রেশন দেখা দিয়াছিল তাহা টিকিয়াছিল ১০ বত্সর যাবত্। সাধারণ সময়ে মন্দা পরিস্থিতি পূর্বেই খানিকটা উপলব্ধি করা যায় শেয়ারবাজারের পরিস্থিতির উপর। ১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার পড়িতে শুরু করিয়াছিল ডিপ্রেশনের পূর্বে। উল্লেখ্য, তাহার পরও অর্থনীতির এই পতনের সময় কিছু কিছু খাত টিকিয়া থাকিতে পারে। যেমন দ্রুত বিক্রয় হওয়া ভোগ্যপণ্য এবং উচ্চ উত্পাদনশীল পণ্যের শেয়ার টিকিয়া থাকিতে পারে।

সে যাহাই হউক, অর্থনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি দেশ এখন আরেকটি দেশের সহিত নিবিড়ভাবে জড়িত। একটি দেশের মন্দা আরেকটি দেশকে প্রায় সমান আকারেই প্রভাবিত করিয়া থাকে ঐ করোনা ভাইরাসের মতোই। বিশেষ করিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিশাল শক্তিশালী অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়িলে আমাদের অর্থনীতিতে তাহা এক বিশাল ছায়া ফেলিবে। আমরা পূর্ব হইতেই এক ধরনের চাপের মধ্যে রহিয়াছি। প্রতিনিয়তই আমাদের মুদ্রাস্ফীতি লাগিয়া থাকে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন যখন অব্যাহত থাকে তখন প্রতিনিয়তই আমাদের কনজিউম-ক্ষমতা হ্রাস পায়।

অর্থনীতির মতে মন্দা বিভিন্ন আকারের হইতে পারে। অর্থনীতিবিদরা ভি এল ইউ ডব্লিউ নামে বিভিন্ন আকারে মন্দাকে ভাগ করিয়াছেন; কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির সহিত আধুনিক পৃথিবীর পূর্বে পরিচয় হয় নাই। তাই  ইহা যে কোন আকার ধারণ করিবে তাহা কাহারো অনুমানে নাই। সুতরাং আমাদের আগামী পরিস্থিতি, তাহা রিসেশনই হউক আর ডিপ্রেশনই হউক, স্থিরতার সহিত মোকাবিলা করিতে হইবে। অনেক সময় মন্দা মোকাবিলায় করণীয় সঠিকভাবে চিহ্নিত করা দুষ্কর হইয়া পড়ে। তখন দেশের নীতিনির্ধারক এবং অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উপায় লইয়া নানা মত দেখা দিয়া থাকে। এই মতগুলিকে আমাদের ভবিষ্যতে পরিস্থিতি মোকাবিলার সময়ে সহনশীলতার সহিত গ্রহণ করিতে হইবে।