বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পবিত্র লাইলাতুল কদর

আপডেট : ২০ মে ২০২০, ২১:৪৩

প্রতি রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য লাইলাতুল কদর আসে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক এক বিশেষ নিয়ামত হিসাবে। কেননা, এই রাত্রেই নাজিল হইয়াছে পবিত্র কোরআন শরিফ। এই কারণে এই রাত্রি এত মহিমান্বিত ও তাত্পর্যপূর্ণ। আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ রাত্রি। আর ‘কদর’ শব্দের অর্থ মর্যাদা বা মাহাত্ম্য। পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাই নাজিল হইয়াছে। সেই সুরায় এই রাত্রির পরিচয় ও মর্যাদা বর্ণনা করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ ১ হাজার মাস সমান ৮৩ বত্সর ৪ মাস। শুধু লাইলাতুল কদরের একটি রাত্রে ইবাদত-বন্দিগির মাধ্যমে ৮৩ বত্সর চার মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে ইবাদত করিবার সওয়াব পাওয়া যায়। এই হিসাবে ইহা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ নিঃসন্দেহে।

লাইলাতুল কদরে হজরত জিব্রাইল (আ.) ফেরেশতাদের নিয়া দুনিয়ার আসমানে উপস্থিত হন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করেন। এই জন্য এই রাত্রি দোয়া কবুলের মোক্ষম সময়ও বটে। সাধারণত ২৬ রমজান দিবাগত রাত্রিকেই আমরা পবিত্র লাইলাতুল কদর হিসাবে পালন করিয়া থাকি। তবে এক রহস্যজনক কারণে ও মানবকল্যাণেই রাত্রিটির তারিখ আসলে সুনির্দিষ্ট নহে। রাসুল (স.) বলিয়াছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলিতে কদরের রাত্রি সন্ধান করো (বুখারি)। এই কারণে যাহারা রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করিয়া থাকেন, তাহাদের এই রাত্রি পাওয়া সবচাইতে সহজ। অবশ্য মুসলিম শরিফ ও মুসনাদে আহমাদের হাদিসে ২৭তম রাত্রির কথাও বলা হইয়াছে। তাহা ছাড়া কিছু আলামত ও বৈশিষ্ট্য দেখিয়া এই রাত্রি চিনা যায়। যেমন এই রাত্রি গভীর অন্ধকারে ছাইয়া যাইবে না, নাতিশীতোষ্ণ হইবে, এই রাত্রে প্রবাহিত হইবে মৃদুমন্দ বাতাস, বৃষ্টি বর্ষিত হইতে পারে এবং ইবাদত করিয়া মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তবোধ করিবে। বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হইবে, দেখিতে পূর্ণিমার চাঁদের মতো—এমন বৈশিষ্ট্যের কথাও বলা হইয়াছে।

লাইলাতুল কদরে ইবাদত-বন্দিগি করিলে শুধু এক সহস্রাধিক রাত্রির ইবাদতের সওয়াবই পাওয়া যায় না, ইহার মাধ্যমে মানুষের অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ-খাতাও মাফ করিয়া দেওয়া হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হইতে বর্ণিত, একটি হাদিসে রাসুল (স.) বলিয়াছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইমানের সহিত ও সওয়াবের নিয়তে ইবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হয়, তাহার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়’ (বুখারি ও মুসলিম)। এই রাত্রি পাইয়াও যে ব্যক্তি তাহার পাপরাশি হইতে মুক্ত থাকিতে পারিল না, তাহার চাইতে হতভাগ্য আর কেহ নাই। রাসুল (স.) সেই দিকে ইঙ্গিত করিয়া বলিয়াছেন, ‘তোমাদের মাঝে একটি মাস আসিয়াছে, যাহার মধ্যে এমন একটি রজনি রহিয়াছে, যাহা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি উক্ত রজনি হইতে বঞ্চিত হইল, সে যেন যাবতীয় কল্যাণ হইতেই বঞ্চিত হইল (ইবনে মাযাহ)।’ অতএব, লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট বিশেষভাবে করোনা মহামারি হইতে পরিত্রাণের জন্যও প্রার্থনা করিব। তিনি আমাদের দোয়া কবুল করুন।