বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইনের শাসন ছাড়া সামাজিক অপরাধ বন্ধ হইবে না

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২৩

রাজধানীর ডেমরায় গত সোমবার রাত্রে দুই শিশুকে শ্বাসরোধ করিয়া নির্মমভাবে হত্যা করা হইয়াছে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী তাহাদের বলাত্কারের চেষ্টা করা হইয়াছিল। নিহত নুসরাত জাহান ও ফারিয়া আক্তার দোলা নামে এই দুই শিশুর বয়স মাত্র যথাক্রমে চার ও পাঁচ বত্সর। গত শনিবার পুরাতন ঢাকা গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডে ঘটিয়াছে তাহার চাইতেও নির্মম ও বর্বর ঘটনা। দুই বত্সরের এক শিশুকে বলাত্কার করিয়া তাহাকে বারান্দা হইতে ফেলিয়া হত্যা করিয়াছে পাষণ্ড এক ব্যক্তি। আদালতে আসামির নিজের মেয়ে তাহার বিরুদ্ধে এই ঘটনার সাক্ষ্য দিয়াছে। নিহত শিশুর মা মেয়ের শোকে পাগলপ্রায় এবং তিনি কবর খুঁড়িয়া মেয়ের লাশ বাহির করিবার চেষ্টা পর্যন্ত করিয়াছেন। অন্যদিকে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হইয়াছে। ঢাকার তুরাগে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীও শিকার হইয়াছে ধর্ষণের। এভাবে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার খবর প্রায় প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় ছাপা হইতেছে। কিন্তু তাহা প্রতিরোধ করা যাইতেছে না। মিলিতেছে না তাহার প্রতিকারও।

একটি মানবাধিকার সংগঠন গতকাল দাবি করিয়াছে যে, গত বত্সর ২০১৮ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হইয়াছেন ৭৩২ জন। ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হইয়াছেন ৬৩ জন আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করিয়াছেন সাতজন। তাহার আগের দুই বত্সরে অর্থাত্ ২০১৭ ও ২০১৬ সালে ধর্ষণের শিকার হইয়াছেন যথাক্রমে ৮১৮ ও ৭২৪ জন। বিশেষ করিয়া শিশু ধর্ষণসংক্রান্ত নির্যাতন যেভাবে বাড়িতেছে তাহা উদ্বেগজনক। এই ধরনের বর্বরতম ঘটনা ‘আইয়্যামে জাহিলিয়াত’কেও হার মানাইয়া দেয়। মানুষ কতটা নিচুতে নামিতে পারিলে দুধের শিশুর প্রতিও এমন নিষ্ঠুর আচরণ করিতে পারে, তাহা ভাবিতেও আমাদের কষ্ট হয়। ইহার জন্য অপরাধমূলক নানা সিনেমা, নাটক, গান, সামাজিক মাধ্যমে ছড়াইয়া পড়া অশ্লীলতা, পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানে অশ্লীল ভিডিও প্রদর্শনী, বিদেশি টিভি-চ্যানেলের কুপ্রভাব ইত্যাদিকে অনেকে দায়ী করিয়া থাকেন। তবে আইনের শাসনের অভাবই এইজন্য সবচাইতে বড় দায়ী। একটি দেশে যখন আইনের শাসন থাকে না, আইন তাহার নিজস্ব গতিতে চলে না, তখন পেশাদার-অপেশাদার খুনি ও অপরাধীরা বেপরোয়া হইয়া উঠে। তখন আইনকে তাহারা কোনো তোয়াক্কা করে না। কখনো কখনো স্থানীয় জনতার বিক্ষোভ প্রদর্শন, থানা ঘেরাও এবং গণমাধ্যমের চাপে কাহাকে গ্রেফতার করা হইলেও তাহাদের অধিকাংশ একসময় আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়া জামিনে বাহির হইয়া আসে। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন বা বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কার কারণেও অনেক সময় মানুষ আদালতের নিকট শরণাপন্ন হইতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন।

শিশুর ওপর নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে প্রতিবাদী ও সচেতন হইতে হইবে। শাস্তি লঘু বা গুরু—যাহাই হউক না কেন, আইনের সঠিক বাস্তবায়নের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হইবে। অপরাধ করিয়া ছাড়া পাইবার নিশ্চয়তা থাকিলে কোনো সমাজে অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নহে। তাই দেশে আলোড়িত পারিবারিক ও সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দ্রুতবিচার আইনের আওতায় আনা উচিত। এই ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।