শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এত সাহস কোথা হইতে পায় মাদক কারবারিরা?

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৪

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় রেল কলোনির মাদককারবারি ও মাদকসেবীদের কাজে বাধা দিয়াছিলেন ইমরান হোসেন। কয়েকজন ‘দুর্বৃত্ত’ গত সোমবার রাতে তাহাকে নিজগৃহে ছুরিকাঘাত করিয়া হত্যা করে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য অনুযায়ী, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূল্য হিসাবেই জীবন দিতে হইল মাদ্রাসা-শিক্ষক ইমরানকে।

সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাইতেছে। ইহা পুরাতন খবর। গত বত্সর বন্দুক-যুদ্ধে অনেক মাদক-ব্যবসায়ী নিহত হইয়াছে, এখনো মাঝেমধ্যে নিহত হইতেছে—কিন্তু মাদকের রমরমা খুব যে কমিয়াছে তাহা সংবাদপত্রে প্রকাশিত নানান সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মনে হইতেছে না। ইহার কারণ কী? মাদক ব্যবসায়ীদের স্মৃতিশক্তি কি তবে গোল্ডফিশের মতোন? গোল্ডফিশ যেমন অত্যন্ত স্বল্প স্মৃতিশক্তি লইয়া জগত্টাকে কেবল ‘বর্তমান’ হিসাবে দেখে, যাহাদের অতীতের স্মৃতি থাকে না বলিলেই চলে—মাদক ব্যবসায়ীরাও কি মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা ভুলিয়া গিয়াছে? তাহারা কি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া তাহাদের দোসর মাদকব্যবসায়ীদের পরিণতির কথাও ভুলিয়া গিয়াছে? ইহা ঠিক যে, মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকটাই অ্যামিবার মতোন, অত্যন্ত দ্রুত ভোল বদল করিতে পারে। তাহারা কৌশল পাল্টাইয়া মাদক কেনাবেচা করিতেও ওস্তাদ। হোম ডেলিভারি মাধ্যমে, কখনো বাসে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারে, কখনো ডাবে, কখনো ফলের গাড়িতে, কখনো বা ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আড়ালে বাহক কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবার লেনদেন করিবার কথা জানা যায়। ইতিপূর্বে ইয়াবা লইয়া ইত্তেফাকে নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে। সেইখানে উঠিয়া আসিয়াছে ইয়াবা ব্যবসার গডফাদারদের নাম। কোন কোন রুট ধরিয়া এবং কীভাবে নূতন নূতন রুট তৈরি করিয়া ইয়াবা পাচারের জাল বিছানো হইয়াছে দেশজুড়িয়া—তাহারও স্পষ্টচিত্র প্রকাশিত হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রীও ইতিপূর্বে বলিয়াছেন যে, আমরা আমাদের শিশুদের এইভাবে ধ্বংস হইয়া যাইতে দিতে পারি না। অনুসন্ধানে দেখা গিয়াছে, গত ছয় বত্সরে নেশাখোর ছেলের হাতে খুন হইয়াছেন চার শতাধিক পিতা-মাতা। স্বামীর হাতে খুন হইয়াছেন আড়াই শতাধিক নারী। মাদক সেবন লইয়া বিরোধে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়াছে ছয় সহস্রাধিক। একই কারণে প্রেমিক বা প্রেমিকার হাতে খুন হইয়াছে ছয় শতাধিক তরুণ-তরুণী!

ইহা ঠিক যে, বিশ্বের অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রও হিমশিম খাইয়াছে এবং খাইতেছে মাদক নির্মূলে। মাদক এমন একটি অন্ধকার জগতের অবৈধ ব্যবসা, যাহার হাত ধরিয়া বিপুল অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি লাগামছাড়াভাবে মাত্রা পাইতে থাকে। বিশ্বের অনেক সচেতন রাষ্ট্র তাহার তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক হইতে রক্ষা করিতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করিয়া থাকেন। জানা গিয়াছে, ইয়াবা বড়ির পিছনে মাদকসেবীরা বত্সরে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ করিয়া থাকেন। মাদকসম্রাটদের প্রায় সকলেই চিরকাল ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সহিত যুক্ত হইয়া থাকে। এমনকী পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গিয়াছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের একটি অংশও এই ব্যবসার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। আমরা আশা করিব, মাদক প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’-এর ফলাফল জিরো হইবে না। যতই অমানবিক শোনাক না কেন, যাহারা কোটি কোটি তরুণ-জীবন ধ্বংস করে, সেই সকল মাদক-ব্যবসায়ীকে রুখিবার জন্য প্রয়োজনে প্রকাশ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাইতে পারে।