শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কেন এই বেপরোয়া মনোভাব?

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৩

রেলপথেও রক্তক্ষরণ থামিতেছে না। একের পর এক মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটিতেছে— যাহা একটু দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতার মাধ্যমে সহজেই প্রতিরোধযোগ্য। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত্রে চট্টগ্রামের কদমতলী রেলক্রসিং এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়িয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারাইয়াছেন এক হতভাগ্য মা। মায়ের কোলে থাকা দুই মাস বয়সী শিশুসন্তানটি প্রাণে বাঁচিয়া গেলেও তাহার পা কাটা পড়িয়াছে। জীবন সংকটমুক্ত নহে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, নিহত রোকসানা আক্তার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেললাইনসংলগ্ন ঝুপড়ি ঘরে থাকিতেন। দুর্ঘটনায় দ্বিখণ্ডিত হইয়া গিয়াছে তাহার শরীর। কাকতালীয়ভাবে খবরটি যেদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, সেদিনই ইত্তেফাকে নারায়ণগঞ্জে রেলক্রসিং পারাপারের একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে। ছবিতে দেখা যায়, দ্রুতগতির একটি ট্রেন প্রায় ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছে। লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান দু’দিকেই ক্রসবার নামাইয়া রাখিয়াছেন। কিন্তু সকল সতর্কবার্তা উপেক্ষা করিয়া সেই অবস্থায় সাইকেলসহ এক ব্যক্তি রেলক্রসিং পার হইতেছেন। ছবিটি দেখিয়া শিহরিত হইতে হয়। আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানাইয়াছেন যে, নারায়ণগঞ্জের ১নং রেলগেট, ২নং রেলগেট, বালুর মাঠ, গলাচিপা, পালপাড়া কিংবা চাষাড়া রেলগেটসহ নগরীর প্রতিটি রেলক্রসিংয়ে একই চিত্র। যাহার যেখানে ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা ধাবমান ট্রেনের সামনে দিয়া রেললাইন পার হইতেছে। এমনকি নিজের জীবনের প্রতি যে মমত্ববোধ থাকা দরকার তাহাও যেন উধাও হইয়া গিয়াছে! প্রশ্ন হইল, কেন এই বেপরোয়া মনোভাব? কোথায় ইহার শিকড়? 

লক্ষণীয় যে, কেবল চট্টগ্রাম কিংবা নারায়ণগঞ্জই নহে, সারা দেশের চিত্রই অভিন্ন। খোদ রাজধানী ঢাকায় ব্যস্ত রেললাইনের পাশ ঘেঁষিয়া এমনভাবে বসতি, বাজার এবং হরেক রকম দোকানপাট ও স্থাপনা গড়িয়া তোলা হইয়াছে যে, চলন্ত ট্রেনগুলিকে হলিউডি সিনেমার অবাস্তব কোনো ভৌতিক দৃশ্য বলিয়া ভ্রম হইতে পারে। রেললাইনের উপর বসা বাজারে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটিয়াছে। কিন্তু বাজার, বস্তি, দোকানপাট সবই আগের মতোই আছে। ফলে যাহা হইবার তাহাই হইতেছে। প্রায়শ দুর্ঘটনায় ঝরিয়া পড়িতেছে বহু তাজা প্রাণ। কিন্তু কী পথচারী কী জনগণ কী রেল কর্তৃপক্ষ— কোনো পক্ষেরই কোনো প্রকার বোধোদয় হইতেছে না। রেলপথের সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন আছে, আছে প্রশাসন। সেই প্রশাসনের চোখের সম্মুখেই সব হইতেছে। কাহারা রেলের জায়গা দখল করিতেছে, কীভাবে করিতেছে— তাহা কাহারও অজানা নহে। পরিতাপের বিষয় হইল, দেশ আগাইয়া যাইতেছে— সরকার বদলাইতেছে, কিন্তু সর্বব্যাপী এই অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার জটাজাল হইতে আমাদের মুক্তি মিলিতেছে না। কারণ এই ক্ষেত্রে যাহা ঘটিতেছে তাহাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা হইতে আলাদা করিয়া দেখিবার কোনো অবকাশ নাই। বরং ইহাও সেই বটবৃক্ষেরই শিকড়বাকড় মাত্র। আমরা বরাবরই বলিয়া আসিতেছি যে, সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনা না গেলে সড়ক-মহাসড়কের মতো রেলপথও রক্তাক্ত হইতেই থাকিবে। ইহা হইতে পরিত্রাণ পাইতে হইলে প্রথমত নিজেদের সচেতন ও দায়িত্বশীল হইতে হইবে এবং সর্বোপরি পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ইহার অনুশীলন অব্যাহত রাখিতে হইবে।