শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুখ ও সুখী দেশের তালিকা

আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ২২:১৫

প্রায় সময় আমরা বলিতে শুনি যে, বাংলাদেশের মানুষ খুবই সুখী। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও উদার দেশ এমন সার্টিফিকেটও উন্নত দেশের অনেকেই দিয়া থাকেন। কিন্তু জাতিসংঘ প্রতিবত্সর সুখী দেশের যে তালিকা প্রণয়ন করে, সেখানে বাংলাদেশকে আমরা কেন পিছনের সারিতে দেখি, তাহা অনেকের কাছে বোধগম্য নহে। এই বত্সর সুখী দেশের তালিকায় আগের বত্সরের চাইতে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনতি হইয়াছে। সমপ্রতি জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) প্রকাশিত তালিকায় ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের এবারের অবস্থান হইল ১২৫তম। গত বত্সর এই অবস্থান ছিল ১১৫তম। গত ২০ মার্চ পালিত বিশ্ব সুখ দিবস উপলক্ষে এই তালিকাটি প্রণয়ন করা হইয়াছে। এখানে সুখের খবর হইল, সুখী দেশ হিসাবে ভারত ও শ্রীলঙ্কার চাইতে আগাইয়া আছি আমরা। তবে ভুটান (৯৫তম) ও নেপালের (১০০তম) তুলনায় পিছাইয়া আছি। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসা করিলেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের (৬৩তম) চাইতে পিছাইয়া পড়িল কিভাবে? ইহা কৌতূহল উদ্দীপক বটে।

জাতিসংঘ কর্তৃক সুখী দেশ নির্ণয়ের মাপকাঠি হইল- মাথাপিছু আয়, সামাজিক সহযোগিতা, গড় আয়ু, সামাজিক স্বাধীনতা, উদারতা, বিশ্বাস ইত্যাদি। সুখী দেশ হিসাবে বিবেচনার জন্য এইসব মানদণ্ডের অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছাইয়া থাকার কোনো অবকাশ নাই। যেমন- আমাদের মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু ক্রমবর্ধমান। এই তালিকায় থাকা শীর্ষ দশ দেশ হইল- ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রিয়া। অন্যদিকে কম সুখী দেশ হইল- দক্ষিণ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আফগানিস্তান, তানজানিয়া, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, মালাবি, সিরিয়া, বতসোয়ানা ও হাইতি। দেখা যাইতেছে, প্রতিবত্সরই উত্তর ইউরোপের নরডিক ও শীতপ্রধান দেশগুলি এই ব্যাপারে শীর্ষ অবস্থান দখল করিতেছে। আর নিচের দিকে স্থান করিয়া লইতেছে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণ ও বিশৃঙ্খল দেশগুলি। তাহার মানে সুখের সহিত কি আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে? প্রকৃতপক্ষে এইসব দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা লাগিয়াই আছে। কিন্তু ইহার জন্য এইসব দেশের নাগরিকরা যতটা দায়ী, তাহার চাইতে প্রভাব বিস্তারকারী একশ্রেণির উন্নত দেশ কম দায়ী নহে।

সুখ আসলে একটি আপেক্ষিক বিষয়। ইহা ধনী-নির্ধনের বিষয় নহে। ইহা একটি জৈবচেতনা যাহা সৃষ্টি হয় মানুষের মস্তিষ্কে। এই কারণে ইহা নির্ভরশীল অনেকটা মানসিক অবস্থার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান ও কগনিটিভ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লরি স্যান্টোস মনে করেন, ব্যক্তিগতভাবে সুখী হওয়াটা নির্ভর করে চর্চার ওপর। এইজন্য কিছু কলাকৌশল যেমন- নিশ্চিন্তে প্রতিদিন আট ঘণ্টা করিয়া ঘুমানো, প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করিয়া মেডিটেশন বা ধ্যান করা, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সহিত সময় কাটানো, সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে বাস্তবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো ইত্যাদি রপ্ত করা প্রয়োজন। আবার সুখ বিষয়টি যেহেতু পারিপার্শ্বিকতার সহিতও জড়িত, এইজন্য একটি দেশে ভারসাম্যপূর্ণ সমৃদ্ধি, কম অসমতা, সরকারের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা, দুর্নীতিমুক্ত ব্যবসা ইত্যাদি থাকা অত্যাবশ্যক। সুতরাং শুধু দৃশ্যমান উন্নয়ন নহে, সুখী হওয়ার জন্য যেসব নাগরিক অধিকার রহিয়াছে, তাহার সুরক্ষাও অত্যন্ত জরুরি।