শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আলজেরিয়া ও সুদানে ক্ষমতার পালাবদল প্রসঙ্গে

আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৯

নয়দিনের ব্যবধানে আলজেরিয়া ও সুদানের দীর্ঘমেয়াদি শক্তিমান শাসকেরা ক্ষমতা হইতে বিদায় লইলেন। আলজেরিয়াতে আবদেল আজিজ বুতেফ্লেকা দুই দশক এবং সুদানে ওমর আল বশির তিন দশক ধরিয়া শাসন করিবার পরে গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করিলেন। আজিজ ও বশিরের পদত্যাগের ঘটনাকে অনেক বিশ্লেষক আরব দুনিয়াতে দ্বিতীয় ‘আরব বসন্তের’ সূচনা হিসাবে চিহ্নিত করিতে চাহিতেছেন। ২০১১ সালের ন্যায় নূতন কোনো ঝাপটা আসিয়া গোটা আরব অঞ্চলকে কাঁপাইয়া দিবে কিনা— তাহা দেখিবার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করিতে হইবে। তবে আলজেরিয়া ও সুদানে এইবারের ঘটনাপ্রবাহে নিশ্চিতভাবেই কয়েকটি উল্লেখ করিবার মতো ঘটনা ঘটিয়াছে— সেইগুলির তাত্পর্য সুদূরপ্রসারী বলিয়া মনে হইতেছে।

লক্ষণীয় যে, ‘আরব বসন্তের কালে’  সুদান ও আলজেরিয়ার শাসকেরা দমন-নিপীড়ন চালাইয়া আন্দোলন দমাইয়া ফেলিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। এইবার তাহা হয় নাই। কেননা তাহারা প্রথমবারের ঘটনাপ্রবাহ হইতে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই। নিজেদেরকে এতটুকু সংশোধন করেন নাই। বেকারত্বের উচ্চ হার, খাদ্যদ্রব্যের অতি উচ্চমূল্য এবং ইন্টারনেটের বদৌলতে সারা দুনিয়ার খোলা-হাওয়া গ্রহণ করা তরুণ ও সদ্য তরুণদের ভবিষ্যত্ লইয়া দুশ্চিন্তা— এইসব কিছুরই সুরাহা হয় নাই বিগত বত্সরগুলিতে। বরং যখনই কোথাও কোনো দাবি উচ্চারিত হইতে শুরু করিয়াছে, সেইগুলিকে বলপূর্বক স্তব্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সুদানের বশির একেবারের শেষের দিকে আসিয়া জরুরি আইন জারি করিয়া, সংলাপের প্রলোভন দেখাইয়াও শেষ রক্ষা করিতে পারেন নাই। আলজেরিয়াতে আজিজ নানাবিধ ছলচাতুরি করিয়া পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে অবতীর্ণ হইতে চাহিয়া ব্যর্থ হইয়াছেন।

সুদান ও আলজেরিয়াতে এইবারের আন্দোলনে অন্তত দুইটি নূতন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হইয়াছে— যাহা শাসকচক্র ঠিক মালুম করিয়া উঠিতে পারেন নাই। প্রথম কথা হইতেছে, এইবারের আন্দোলনে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট নেতৃত্ব বা ভরকেন্দ্র ছিল না। মূলত ইন্টারনেট প্রজন্মের তরুণেরা দ্রুত বেগে সিদ্ধান্ত চালাচালি করিয়াছেন এবং স্থানিক পর্যায়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। ইহা ছাড়াও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সনাতনী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব লইয়া হল্লা করিবার সুযোগও এইবার সেইভাবে পায় নাই। উল্লেখ করিবার মতো বিষয় এই যে, বিশেষ করিয়া সুদানে সশস্ত্র গ্রুপগুলিও এইবার সরকারবিরোধী আন্দোলনে খুব একটি সুবিধা করিতে পারে নাই। মূলত নানা ধরনের উসকানি সত্ত্বেও কোনোভাবেই সহিংসতায় লিপ্ত না হইবার মধ্যেই এইবার আলজেরিয়া ও সুদানে আন্দোলনের সাফল্য নিহিত রহিয়াছে। এতসব নৈপুণ্যের মধ্যেও এই দুই দেশে স্বৈরাচারের অবসানের সুফল কতখানি গণতান্ত্রিক শক্তির হস্তগত হইবে— সেই বিষয়ে বিশেষ সন্দেহ থাকিয়া যাইতেছে। ভুলিলে চলিবে না যে, উভয় দেশেই সরকার পতনের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীই সমাপ্তি রেখাটি টানিয়াছে। আগামী দিনগুলিতে রাষ্ট্র কেমন করিয়া চলিবে— তাহাও সামরিক বাহিনীর পক্ষ হইতেই ঠিক করা হইতেছে। আলজেরিয়া ও সুদানের গণতান্ত্রিক শক্তি এইক্ষেত্রে কতটা দরকষাকষি করিতে পারে তাহাই এখন দেখিবার বিষয়।