শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রেলওয়ের যুগোপযোগী ওয়ানস্টপ যাত্রীসেবা

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ২১:১৫

রেলভ্রমণ তুলনামূলক নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। আমরা দেখিতে পাই, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে মাকড়শার জালের মতো ব্যাপক পরিসরে রেলপরিষেবার বিস্তার ঘটিয়াছে, যাহা তদনুযায়ী বাংলাদেশে ঘটে নাই। তবে দেশের যেই সকল জেলায় রেলপথ রহিয়াছে, সেই সকল স্থানে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রথম পছন্দ ট্রেন। কিন্তু রেলপরিষেবার আধুনিকীকরণে বাংলাদেশ কচ্ছপগতিতে আগাইয়াছে। রেলের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চালু হইবার পর ইহার বিদ্যমান সমস্যা ও তদনুযায়ী উন্নয়ন যত দ্রুত হইবার কথা ছিল, তত দ্রুত হয় নাই। বাংলাদেশে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি থাকিবার কারণে টিকিটের কালোবাজারি একটি বড় সমস্যা। কালোবাজারিদের সহিত যোগসাজশের অভিযোগ রহিয়াছে রেলের কোনো কোনো অসাধু কর্মচারীর। সুতরাং কালোবাজারি রোধ করিবার পথে বাধা কম নহে। কয়েক মাস পূর্বে কালোবাজারি রোধ করিতে রেল কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনের মাধ্যমে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রয়ের ব্যবস্থা লইয়াছিল। সম্প্রতি সরকার একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ লইয়াছে। জানা গিয়াছে, চলতি এপ্রিল মাসের শেষার্ধে সরকার চালু করিতে যাইতেছে ওয়ানস্টপ যাত্রীসেবা তথা রেলওয়ের মোবাইল অ্যাপ।

বর্তমানে রেলের কিছু সেবা অনলাইনে ও এসএমএসের মাধ্যমে দেওয়া হইলেও রেলের সকল সেবা একটি মাত্র প্ল্যাটফর্মে লইয়া আসা হইতেছে। আশা করা যাইতেছে, রেলওয়ের বিশেষ এই অ্যাপ চালু হইলে রেলের টিকিটিং সিস্টেমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসিবে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে বসিয়াই রেলভ্রমণের জন্য টিকিট কাটা ও ট্রেনের সময়সূচি জানা সম্ভব হইবে। অ্যাপটি এতটাই আধুনিক ও বিশেষ সেবামূলক যে, ইহার মাধ্যমে একজন যাত্রী সহজেই জানিতে পারিবেন কখন কোন ট্রেনটি কোথায় রহিয়াছে, গন্তব্যে পৌঁছাইবে কখন, এমনকী কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটিলেও সেই স্থানের বর্ণনা ও কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটিতেছে—তাহাও জানা সম্ভব হইবে। ইহা ছাড়াও এই অ্যাপের মাধ্যমে একজন যাত্রী তাহার প্রাপ্য সেবা না পাইলে সেবা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট সকল সমস্যার তাত্ক্ষণিক সমাধান পাইবেন। এমনকী যাত্রাশেষে সেবার মান লইয়া একজন যাত্রী এই অ্যাপে মতামত এবং ট্রেনে ‘রেটিং’ প্রদান করিতে পারিবেন। ফলে, রেল কর্তৃপক্ষও কেমন সেবা প্রদান করিতেছে ও যাত্রীরা কীভাবে তাহা গ্রহণ করিতেছেন— ইহারও একটি স্পষ্ট চিত্র মিলিবে। আশা করা যাইতেছে, ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমে মোবাইল অ্যাপের পাশাপাশি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, কল সেন্টারসহ পরিপূর্ণ সেবা বাস্তবায়িত হইবে আগামী এক বত্সরের মধ্যে।

প্রকৃতপক্ষে রেলের আমাদের যতটুকু সেবা প্রদানের সামর্থ্য ও ব্যবস্থা রহিয়াছে, প্রযুক্তির এই অতি আধুনিক যুগে তাহার হালনাগাদ না করাটাই বিস্ময়ের। বেটার লেট দ্যান নেভার। সুতরাং ভালো যাত্রীসেবা প্রদানের ব্যাপারে সরকারের এই আন্তরিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাইতেই হয়।