শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আয়োডিনের স্বল্পতাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ২১:১৮

গবেষকরা বলিতেছেন যে, দেশের প্রায় ছয় কোটি মানুষ আয়োডিন স্বল্পতার শিকার। আর তিন কোটি মানুষ জানেন না যে, তাহারা আয়োডিন ঘাটতির শিকার হইয়া স্বল্প বুদ্ধি ও শিখন ক্ষমতা কমিয়া যাওয়াসহ নানা জটিল রোগে ভুগিতেছেন। উদ্বেগজনক এই তথ্যটি প্রকাশিত হইয়াছে গত সোমবারের ইত্তেফাকে। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, এদেশের মাটি আয়োডিন ঘাটতি অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হওয়ায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও শাক-সবজিতে আয়োডিন থাকার সম্ভাবনা নাই বলিলেই চলে। ফলে ঘাটতি পূরণের জন্য একমাত্র আয়োডিনযুক্ত লবণ গ্রহণের উপর নির্ভর করিতে হইতেছে। কিন্তু গবেষকদের অভিযোগ হইল, লবণে আয়োডিন মিশানোর জন্য ক্রেতাদের নিকট হইতে কেজিপ্র্রতি ২০/২৫ টাকা অতিরিক্ত দাম নেওয়া হইলেও সঠিক পরিমাণে আয়োডিন মিশানো হইতেছে না। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি সঠিকভাবে তাহা মানিয়া চলিতেছে না বলিয়া তাহারা মনে করেন। গবেষকরা ইহার জন্য তদারকির অভাবকেই দায়ী করিয়াছেন।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে আয়োডিন ঘাটতির এই উদ্বেগজনক চিত্র তুলিয়া ধরা হইয়াছে। বৈঠকে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এই মর্মে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয় যে, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হইলে জনস্বাস্থ্যের উপর ইহা দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতে পারে। কারণ আয়োডিনের অভাবে শুধু যে চুল কমিয়া যাওয়া, স্থূলতা ও খর্বত্বের মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাহাই নহে, হ্রাস পাইতে পারে স্মরণশক্তি ও ধৈর্য-ক্ষমতা। ভাটা পড়িতে পারে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহেও। সর্বোপরি, মহিলাদের গর্ভবতী অবস্থায় আয়োডিনের ঘাটতি বেশি হইলে মৃত সন্তান প্রসব, গর্ভপাত, শিশুর জন্মগত অস্বাভাবিকতাসহ অনিরাময়যোগ্য নানা সমস্যার সৃষ্টি হইতে পারে বলিয়াও গবেষকরা মনে করেন।

প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, আমাদের দেশে আয়োডিনের ঘাটতির বিষয়টি নূতন নহে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন বলিয়াই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। একসময় আমাদের দেশে আয়োডিনের অভাবজনিত গলগণ্ড রোগের ব্যাপকতার বিষয়টিও সুবিদিত। কিন্তু সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে এই ক্ষেত্রে যে তাত্পর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হইয়াছে তাহা চর্মচক্ষেই দৃশ্যমান। তবে গবেষকরা যেইসকল বিষয় উত্থাপন করিয়াছেন, আমরা মনে করি, তাহাও যথাযথ গুরুত্বের সহিত যাচাই করিয়া দেখা উচিত। নিশ্চিত হওয়া উচিত উত্থাপিত অভিযোগের সত্যাসত্য বিষয়ে। যেহেতু এই বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা রহিয়াছে, অতএব, তাহা অনুসরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গাফিলতি পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের যেমন দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত, তেমনি আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে গ্রহণ করা উচিত কার্যকর পদক্ষেপ।