শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাকার কোথায় আছে পরিকল্পনার ছাপ?

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪২

বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় নগরীর তুলনায় আয়তন অনুযায়ী ঢাকা এমন কোনো বড় শহর নহে। তবে জনসংখ্যা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট নগরী হিসাবে স্বীকৃত। ইতিপূর্বে বিশ্বের দ্বিতীয় নিকৃষ্ট নগরী হিসাবে স্থান দখল করিয়াছে ঢাকা। এমন অপরিকল্পিত নগরী বিশ্বে খুব বেশি দেখা যায় না, যেই কারণে নানা ধরনের দুর্ঘটনা-দুর্বিপাক ঢাকার আকাশে বাতাসে ভাসিয়া বেড়ায়।

ঢাকাকে পরিকল্পিত নগরীর আওতায় আনিতে সময়-সময় নানা ধরনের প্রকল্প ও পরিকল্পনার কথা আমরা শুনিতে পাই। কিন্তু তাহার প্রতিফলন ঢাকার গাত্রদেশে কখনোই স্পষ্ট হয় না। এই বত্সর একের পর এক অগ্নি-দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা বারংবার সংবাদের শিরোনাম হইয়াছে। একটি পরিসংখ্যান হইতে জানা যায়, গত পাঁচ বত্সরে দেশে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হইয়াছে। বিগত ১০ বত্সরে কেবল রাজধানীতে বহুতল ভবন বৃদ্ধি পাইয়াছে ৫১৪ শতাংশ। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের মর্মান্তিক অগ্নিদুর্ঘটনার পূর্বে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানসনে কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণে দগ্ধ হইয়া ৭০ জন নিহত হন। গত শুক্রবার ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরাতন ঢাকায় ওই অগ্নিদুর্ঘটনার পর বিশেষ টাস্কফোর্স বিভিন্ন কেমিক্যাল কারখানায় অভিযান চালায়। ৩৩ দিন ধরিয়া টাস্কফোর্স অভিযান চালাইয়া ১৭০টি কেমিক্যাল গোডাউন সিলগালা করিয়া দেয়। জানা গিয়াছে, আবাসিক এলাকায় ওই সকল কেমিক্যাল গোডাউনের কয়েকটি হইতে মালামাল সরাইয়া নেওয়া হইলেও বাকিগুলি আগের অবস্থাতেই রহিয়াছে। একটি সূত্রমতে, পুরান ঢাকায় ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত কেমিক্যাল গোডাউনই রহিয়াছে আড়াই হাজারের অধিক। অন্যদিকে ট্রেড লাইসেন্সহীন কেমিক্যাল গোডাউনের সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক! সুতরাং প্রতিমাসে যে একটি করিয়া দুর্ঘটনা ঘটে না, তাহাই সৌভাগ্যের। টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানাইয়াছেন যে, অভিযানের সময় ঠিকমতো রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা পাওয়া যায় না। ইহার কারণ হিসাবে ওই কর্মকর্তা জানাইয়াছেন যে, ব্যবসায়ীরা খবর পাইয়া অভিযানের আগেই সকল রাসায়নিকের ড্রাম দ্রুত সরাইয়া লয়। এইদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সহিত বৈঠকে রাসায়নিক কারখানা ও গোডাউন কেরানীগঞ্জে স্থায়ী পল্লীতে না যাওয়া অবধি সাময়িক সময়ের জন্য কদমতলী ও টঙ্গীর দুটি জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। অথচ এখন অবধি কোনো গোডাউন সেইখানে স্থানান্তর হয় নাই। চকবাজারে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সংরক্ষিত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ অপসারণের অভিযান যখন চলিতেছিল, তখনই আমরা প্রশ্ন তুলিয়াছিলাম—ইহার পর কি নিয়মিত নজরদারি করা হইবে, যাহাতে এই ধরনের দাহ্যপদার্থ অবৈধভাবে সংরক্ষণ করা না হয়? সেই প্রশ্নটিই গত শুক্রবারে ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে।

বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, ঢাকা শহরের ৭৩ শতাংশ উন্নয়নই অপরিকল্পিত এবং এই কারণেই সৃষ্টি হইতেছে নানা জটিলতা। বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহরের অভিধা হইতে মুক্তি পাইতে হইলে ঢাকাকে সুপরিকল্পিতভাবে গড়িয়া তুলিবার বিকল্প নাই।