শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দুদক চেয়ারম্যানের দৃঢ়চেতা কর্ম-উদ্যম

আপডেট : ১৫ মে ২০১৯, ২২:০৩

দুর্নীতি এমন একটি সমস্যা, যাহা জটিল ভাইরাসের মতো, পিছাইয়া পড়া জনপদগুলির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়া থাকে। এই কারণে ইহাকে রাতারাতি নির্মূল করা একঅর্থে অসম্ভব। তবে দুর্নীতি দমনের নিরন্তর চেষ্টার একটি ইতিবাচক ফল একটি সময় জাতি নিশ্চয়ই পাইবে। আমরা তাহারই প্রতিফলন দেখিতে পাইতেছি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের তেজদীপ্ত প্রচেষ্টার মধ্যে।

বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, জনাব ইকবাল মাহমুদের মধ্যে রহিয়াছে সততার অপূর্ব ফল্গুধারা। যদিও দুদক এমন একটি সংস্থা যেইখানে সততার সহিত কাজ করিতে চাহিলেই করা যায় না; কিন্তু দুদক চেয়ারম্যান সকল প্রতিবন্ধকতার ঝড়-ঝাপটা সামলাইয়াই তাহার আদর্শিত দায়িত্ব পালন করিয়া যাইতেছেন। সম্প্রতি গত সোমবার তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট জমা দিয়াছেন দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন। সেইখানে তিনি বেশ কিছু তাত্পর্যপূর্ণ সুপারিশ তুলিয়া ধরিয়াছেন। দুদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হইল—সরকারি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ক্রটির কারণেই অধিকাংশ দুর্নীতি সংঘটিত হইয়া থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকিবার কারণেও সেবার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটে। তৈরি হয় দীর্ঘসূত্রতা। এই কারণে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলিতে দৈনন্দিন কর্মপদ্ধতির উন্নয়ন, নূতন পদ্ধতি উদ্ভাবন ও কাজে গতিশীলতা আনিবার পরামর্শ দিয়াছেন দুদক চেয়ারম্যান। ইহার পাশাপাশি সরকারি দপ্তর ও সেবা সংস্থাগুলির দুর্নীতির উত্স চিহ্নিত করিয়া দুর্নীতি-অনিয়ম বা হয়রানি হইতে উত্তরণের জন্য প্রায় ১২০টি সুপারিশ রাখা হইয়াছে ওই প্রতিবেদনে। ইহা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, অনেক সরকারি দপ্তরেই সেবা প্রদান প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সেইসকল জটিল প্রক্রিয়ার কারণেও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। এই ব্যাপারে দুদকের সুপারিশ অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য।

দুদক চেয়ারমান ইকবাল মাহমুদ এই দেশের বিরল সেইসকল মানুষের একজন যাহাদের হূদয়ে বপন করা আছে একটি স্বচ্ছ সুন্দর দুর্নীতিমুক্ত নান্দনিক বাংলাদেশের চিত্র। তিনি বলিয়াছেন, দুর্নীতির মামলা কখন হয়—একটা দুর্নীতি হওয়ার পরই মামলা হয়; কিন্তু দুদক চাহিতেছে দুর্নীতি ঘটিবার পূর্বেই তাহার মূলোত্পাটন করিতে। সমাজে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতি প্রোথিত করিতে চাহেন তিনি। নদীবিধৌত চাঁদপুর জেলায় তাঁহার জন্ম ১৯৫৫ সালে। তিনি ১৯৭২ সালে যখন মাধ্যমিক পাস করেন, তখন সদ্যস্বাধীন দেশ লইয়া নিশ্চয়ই কল্পনা করিয়াছিলেন একটি ন্যায়নীতিপূর্ণ সুন্দর রাষ্ট্রের। নানান কারণে সেই স্বপ্নের দেশ, ন্যায়নীতিপূর্ণ সুন্দর রাষ্ট্র গঠিত হয় নাই এখন অবধি; কিন্তু তাহা কোনোদিনই হইবে না—এমন হতাশার স্রোতেও নিজেকে ভাসাইয়া দেন নাই তিনি। তাঁহার যতটুকু ক্ষমতা ও সামর্থ্য রহিয়াছে, তাহার ভিতর দিয়াই তিনি সংশপ্তকের মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করিয়া যাইতেছেন। ইহা কি কম কথা? দুদকের চেয়ারম্যান পদে আসীন হইবার পূর্বে দীর্ঘ ৩৮ বত্সরের কর্মজীবনে আমরা তাঁহার সততা ও কর্মনিষ্ঠার অপূর্ব নজির দেখিতে পাইয়াছি। সুতরাং দুদকেও যে তাহার দ্ব্যর্থহীন ছাপ পাওয়া যাইবে ইহাতে বিস্ময়ের কিছু নাই। আমরা পুনরায় সাধুবাদ জানাই জনাব ইকবাল মাহমুদের এমন দৃঢ়চেতা কর্মোদ্যোগের।