শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিশুদের হারানো শৈশব ও খেলাধুলা

আপডেট : ২৪ মে ২০১৯, ২১:১৫

বলা হয়, আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যত্। কথাটি হওয়া উচিত আজকের সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিদীপ্ত শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যত্। ভবিষ্যত্ এই কর্ণধারদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। কেননা খেলাধুলা একজন শিশুর সঠিক ব্যক্তিত্ব ও সুস্থ শরীর গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কথায় বলে, সুস্থ দেহ সবল মনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে যেমন ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির সুসম্পর্ক গড়িয়া ওঠে, তাহাদের মধ্যে সুস্থ সামাজিক বিকাশও ঘটে, তেমনি ইহা তাহাদের বিনোদনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়ও বটে। কিন্তু শহর-নগরে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা যতই বাড়িতেছে, ততই বন্দি হইয়া পড়িতেছে শিশুর প্রাণচাঞ্চল্য। খেলাধুলা বলিতে তাহারা এখন প্রধানত বোঝে মোবাইল ও ভিডিও গেমস। আর টেলিভিশনের কার্টুন চ্যানেল হইল তাহাদের বড় বিনোদনের মাধ্যম। এইগুলির প্রয়োজনীয়তা যে নাই তাহা আমরা বলি না। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি ও শারীরিক অনুশীলনের অভাবে তাহারা দিন দিন অবসাদগ্রস্ত, স্থূল ও অলস প্রকৃতির হইয়া উঠিতেছে। এইজন্য শিশুদের জন্য একখণ্ড মাঠ, একটু খোলামেলা জায়গা খুবই প্রয়োজন যেখানে তাহারা খেলিবার পাশাপাশি দৌড়াদৌড়ি, ছুটাছুটি ও হইচই করিতে পারিবে। কিন্তু এইখানেই আমাদের অনেক ক্ষেত্রে নিরাশ হইতে হয়।

জনসংখ্যার চাপ ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় এমনকি মফস্বল শহরগুলি হইতেও আজ খেলাধুলার মাঠ, পার্ক, বন-বাদাড় হারাইয়া যাইতেছে। এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। সম্প্রতি রাজশাহী নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় শিশুদের খেলাধুলার বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক এক বিশেষ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাহাতে বলা হয়, পর্যাপ্ত বহিরাঙ্গন খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিশুদের মাঝে ভিডিও গেমস জনপ্রিয় খেলা হইয়া উঠিতেছে। একইসঙ্গে ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা ইনডোর এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা আউটডোর খেলাধুলায় অধিক সময় ব্যয় করিয়া থাকে। শিশুদের খেলাধুলার গুরুত্ব অনুধাবন করিয়া ইনডোর ও আউটডোর উভয় রকম খেলারই আয়োজন করা আবশ্যক। একইসঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা যেমন- হাডুডু, কানামাছি প্রভৃতিও পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন। এইসব গ্রামীণ খেলায় যেমন খেলার সামগ্রী কম লাগে, তেমনি তাহা শারীরিক কসরতের জন্য উপযুক্ত ও নির্মল আনন্দদায়ক।

বড় উদ্বেগের বিষয় হইল, আজকাল শিশুদের উপর লেখাপড়ার মাত্রাতিরিক্ত চাপ বিদ্যমান। অতিরিক্ত বই, পরীক্ষা এবং কোচিং ও প্রাইভেট টিউটরনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বাসায় ও শিক্ষাঙ্গনে কোথাও শিক্ষার্থীদের দম ফেলিবার অবকাশ নাই। এই কারণেই তাহাদের সোনালি শৈশব ও কৈশর হারাইয়া যাইতেছে। অভিভাবকরাও তাহাদের সন্তানদের খেলাধুলার জন্য সময় দিতে অনাগ্রহী। তাহা ছাড়া বিদ্যমান মাঠগুলি দখল-দূষণের শিকার ও মাদকাসক্তদের আড্ডাখানা হওয়ায় এবং নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকায় শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইতেছে। এই দুর্দশা হইতে মুক্তি পাইতে চাহিদামাফিক নূতন নূতন খেলার মাঠ ও পার্ক স্থাপন, বিদ্যমান মাঠগুলি দখল ও দূষণের হাত হইতে উদ্ধার এবং সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাহা শিশু-কিশোরদের খেলার উপযোগী করিয়া গড়িয়া তোলা একান্ত প্রয়োজন। একইসঙ্গে শিশুদের খেলার বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া ও খেলার সময় খেলিতে অনুপ্রেরণা দানের ব্যাপারে অভিভাবকদের অবশ্যই সচেতনতার পরিচয় দিতে হইবে।