শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বসবাস অযোগ্য হইয়া পড়িতেছে ঢাকা

আপডেট : ২৭ মে ২০১৯, ২১:১২

রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করিয়া বাংলাদেশের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হইয়া থাকে। ঢাকাই আমাদের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচারিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। ঢাকার বিকল্প নগরী এখনো এদেশে গড়িয়া ওঠে নাই। কিন্তু ঢাকার অস্তিত্ব ক্রমশ কলুষিত হইয়াছে আমাদের গোচরে-অগোচরে। ঢাকা অনেক দিন ধরিয়াই বসবাসের অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছে। সম্প্রতি তেমনই এক চিত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘কতটা বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী’ শীর্ষক নগর সংলাপে। সেইখানে বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্টজন মত দিয়াছেন, যে সকল মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করিয়া একটি শহরকে বাসযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা যায়, ঢাকা শহরে তাহার সবকিছুরই ঘাটতি রহিয়াছে। তাঁহারা মনে করেন যানজট, জলাবদ্ধতা, ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান, অপ্রতুল নাগরিক সেবা, বিশুদ্ধ পানির সংকট, বায়ু দূষণ, খোলা গণপরিসরের অভাবসহ রাজধানীতে নানা সংকট বিদ্যমান। কাজেই ঢাকা শহর কোনো মানদণ্ডেই বাসযোগ্য শহর নহে। বাসযোগ্যতার মানদণ্ডে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ঢাকা শহরে আছে ৩৮ পয়েন্ট।

আমরা মনে করি ঢাকার বহুমুখী এই সংকটের কেন্দ্রে রহিয়াছে এর জনসংখ্যার আধিক্য। সরকারি হিসাব মতে বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লক্ষ। আর প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভার রাজধানী ঢাকাকে বহন করিতে হইতেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা সৃষ্টি হইতেছে, বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিতেছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে যত সংখ্যক লোকবল প্রয়োজন তাহার যোগান দেওয়া যাইতেছে না, বাড়তি আবাসন চাহিদা মেটাইতে ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান গড়িয়া উঠিতেছে। পাশাপাশি ঢাকায় রহিয়াছে বায়ু দূষণের সমস্যা। বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তাহার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হইতেছে পিএম ২.৫। এর নির্গমনে বেইজিং এবং দিল্লির পরেই এখন ঢাকার অবস্থান। মূলত যান্ত্রিক উত্স হইতে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ধুলা হইতে বাতাসে ক্ষুদ্র কণাগুলো ছড়াইয়া পড়ে। কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কণার সৃষ্টি হয়। ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী হইতে সৃষ্ট ধুলাই ইহার মূল উত্স। এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লক্ষ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হইতেছে। বায়ু দূষণের কারণে শিশুমৃত্যু হারের দিক হইতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর এই সকল মৃত্যু প্রধানত রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক।

ইহাছাড়া রহিয়াছে পরিকল্পিত নগর বিনির্মাণে ভিশনের অভাব, নগর পরিকল্পনার অনুপস্থিতি, ঢাকা ঘিরিয়া কেন্দ্রীভূত উন্নয়ন প্রবণতা, দুর্বল উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিকল্পনাবিদদের সুযোগের অভাব ও সমন্বয়হীনতা। ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করিয়া তুলিতে হইলে আমাদের এই সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করিয়া উঠিতে হইবে। পাশাপাশি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। যদি আমরা ঢাকা কেন্দ্রিক নাগরিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেশের অন্য শহরগুলিতে ছড়াইয়া দিতে পারি তাহা হইলে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নিশ্চিতভাবেই হ্রাস পাইবে, ইহাতে রাজধানী ঢাকার উপর চাপ কমিবে। মোটকথা, ঢাকাকে যে কোনো মূল্যে হউক এই বিপর্যয়ের মুখ হইতে রক্ষা করিতে হইবে। সেইজন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সামনে নিয়া কাজ করিতে হইবে।