শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হাড় বেশি, মাংস কম!

আপডেট : ০৮ জুন ২০১৯, ২১:৪৮

গরু-ছাগল তো কেবল মাংসসর্বস্ব নহে, একটি কাঠামো তথা কঙ্কালের ওপর গড়িয়া উঠে তাহাদের শরীর। সুতরাং মাংসবিক্রেতারা আস্ত গরু ক্রয়ের মাধ্যমে উপজাত হিসাবে পায় অঢেল হাড়। আর এই হাড় লইয়া প্রায়শই বিপত্তি ঘটে মাংসক্রেতার সহিত। ক্রেতা চাহেন যতখানি সম্ভব মাংসের অংশ বেশি করিয়া বুঝিয়া লইতে। অন্যদিকে বিক্রেতা চাহেন, ওজনের পাল্লা যেন একটু বেশি হেলিয়া পড়ে হাড়ের বদান্যতায়। এইভাবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের শ্যেন নজর থাকে নিজ নিজ স্বার্থটুকু বুঝিয়া লইতে। আর এই কারণেই হাড় লইয়া হাড্ডাহাড্ডি ঝামেলা ঘটে প্রায়শই। এমনই একটি ঘটনা ঘটিয়াছে গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত খবরে জানা যায়, শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা বিশ্বরোড মোড় বাজারে মাংস কিনতে গিয়া মাংসের বদলে হাড়ের পরিমাণ বেশি দেওয়ায় বিক্রেতার সহিত তর্কবিতর্কে জড়াইয়া পড়েন ক্রেতা ধন মিয়া। ইহা লইয়া প্রথমে হাতাহাতি, তাহার পর শুরু হয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এই লড়াইয়ে এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র লইয়া ঝাঁপাইয়া পড়ে দুই গ্রামের লোকজন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনিতে পুলিশকে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হয়। সংঘর্ষে আহত হয় কমবেশি ২০ জন। কেবল তাহাই নহে, সংঘর্ষের সময় ওই অঞ্চলের মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় এক ঘণ্টা।

আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেইখানে নীতি-নৈতিকতাকে শিকায় তুলিয়া যেন-তেন-প্রকারে পন্থায় সকলেই জিতিতে চাহি। প্রতারণা হউক, জোচ্চরি হউক, কথিত নিয়মের ফাঁকফোকর দিয়া হউক— অন্যকে ঠকাইতে আমাদের লোভের জিহ্বা লকলক করে। অন্যদিকে ‘সহিষ্ণুতা’ বলিয়া যে বাংলায় চমত্কার একটি গুণবাচক শব্দ রহিয়াছে, তাহা যেন আমরা ভুলিয়া থাকিতে চাহি। বহুস্থানে মাংসবিক্রেতা এই শর্ত দিয়া মাংস বিক্রয় করেন যে, প্রতি কেজি মাংসে ১০০ গ্রাম চর্বি ও ১০০ গ্রাম হাড় ক্রেতাদের লইতেই হইবে। বিক্রেতারা যেই প্লাস্টিকের গামলায় মাংস ওজন করেন তাহার ওজন অনেকক্ষেত্রেই আলাদাভাবে বাদ দেওয়া হয় না। বাটখারা ডিজিটাল না হইলে একরকম প্রতারণা, দাড়িপাল্লায় হইলে আরেকরকম প্রতারণা করেন কোনো কোনো বিক্রেতা। কিছুদিন পূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন স্থানে কোনো কোনো মাংসবিক্রেতাকে জরিমানা করিয়াছেন নষ্ট মাংস বিক্রির দায়ে। কোনো কোনো মাংসবিক্রেতা দীর্ঘদিন ধরিয়া ফ্রিজে মজুত রাখেন মাংস। ইহাতে মাংস একপর্যায়ে ফ্যাকাশে রং ধারণ করে। বিক্রেতারা এইক্ষেত্রে মাংসে লাল রং দিয়া টাটকা দেখানোর চেষ্টা করিয়া থাকেন। ওই রং মেশানো পুরাতন মাংস এইক্ষেত্রে আরো বেশি বিষাক্ত হইয়া উঠে। এইসকল বিষয়াদী বুঝিয়াসুঝিয়া বাজার করিতে না পারিলে দিনশেষে গিন্নির মুখঝামটাও উপরিপাওনা হয় সাধারণ ক্রেতাদের। সুতরাং সংঘর্ষ ঘটিবার অনেক কারণই রহিয়াছে— ক্রেতাদের নজরে কেবল হাড়ের প্রতারণাই চোখে পড়ে। কিন্তু এইসব কারণে মানুষের সহিষ্ণুতা শূন্যের কোঠায় নামিয়া আসিবে আর প্রাণসংহারী লড়াইতে নামিয়া পড়িবে, আধুনিক সময়ে তাহা অপ্রত্যাশিত।