শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ বাড়িতেছে

আপডেট : ০৮ জুন ২০১৯, ২১:৫২

দেশে বেকারত্বের সমস্যা যেমন রহিয়াছে, তেমনি রহিয়াছে দক্ষ জনশক্তির অভাব। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হইলেও তাঁহাদের কর্মদক্ষতার অভাব রহিয়াছে। তাঁহারা যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিতেছেন কর্মক্ষেত্রে দেখা যাইতেছে তাহার যথোপযোগিতা নাই। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিল্পক্ষেত্রের জনবলের চাহিদার মধ্যে যোগসূত্রতার অভাব দেখা যাইতেছে। শিল্প খাতে এই উচ্চশিক্ষিতরা দক্ষ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত নহেন। ফলে দেশে দক্ষ জনবলের এই অভাবের সুযোগে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ বিভিন্ন দেশের আনুমানিক ১০ লক্ষ মানুষ এনজিও, তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাত ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করিতেছেন। তবে আশার কথা হইল, সম্প্রতি এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিতেছে। দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্রমশ ঝোঁক বাড়িতেছে। গত পাঁচ বছরে তুলনা করিয়া দেখা যাইতেছে, এই ধারার শিক্ষায় প্রতিবত্সরই ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরকে ছাড়াইয়া যাইতেছে। বর্তমানে মোট সোয়া ১২ লক্ষ শিক্ষার্থী কারিগরিতে পড়াশোনা করিতেছেন। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল সোয়া ৯ লক্ষ। সরকারও এখন দক্ষতাভিত্তিক এই কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়াছে। কারিগরির পাশাপাশি সাধারণ ধারার বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি কারিগরি বিষয় (বৃত্তিমূলক) বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নিয়াছে সরকার। ২০২১ সাল থেকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হইবে। ইহার অর্থ চাকরির বাজারে এখন দক্ষতার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হইতেছে। বেসরকারি খাত বড় হওয়ায় দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়িতেছে। বিদেশেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। মূলত চাকরির বাজারের চাহিদা এবং চাকরি না পাইলে নিজেই যাহাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করিতে পারে, সেই চিন্তায় কারিগরি শিক্ষায় অভিভাবক ও তাঁহাদের সন্তানদের আগ্রহ বাড়িতেছে।

তবে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো নানা ধরনের সমস্যা বিরাজ করিতেছে। বিশেষ করিয়া বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যা বেশি। এইসব প্রতিষ্ঠানের মান নিয়াও প্রশ্ন রহিয়াছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, বর্তমানে সমগ্র দেশে ৪ হাজার ৬৭৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এইগুলিতে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হইয়া থাকে। সরকার ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ শতাংশ (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে) এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করিয়াছে। সেই লক্ষ্য নিয়া কাজ চলিতেছে। এখন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার প্রায় ১৬ শতাংশে বৃদ্ধি পাইয়াছে, যাহা ১০ বছর আগেও ছিল ২ শতাংশের মতো।

এক সমীক্ষায় জানা যায়, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে বিভিন্ন খাতে মোট ৮ কোটি  ৮৭ লক্ষ শ্রমিকের দরকার পড়িবে। এই সময় পর্যন্ত দেশের ৯টি শিল্প খাতে নিয়োগ দিতে হইবে আরো ১ কোটি ৬৮ লক্ষ শ্রমিক। ইহার মধ্যে দক্ষ শ্রমিক লাগিবে ৮০ লক্ষ, আধা-দক্ষ শ্রমিক লাগিবে ৫৬ লক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক লাগিবে ৩১ লক্ষ। ফলে যে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হইয়াছে তাহা কাজে লাগাইতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই। আমরা আশা করিব কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিয়া একই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা এবং দেশের শিল্প খাতকে আগাইয়া লওয়া সম্ভব হইবে।