শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঈদের ছুটিতে যেমন ছিল আইনশৃঙ্খলা

আপডেট : ১০ জুন ২০১৯, ২১:৫৫

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, ঈদের ছুটিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিবে। এই সময় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর এলাকায় চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, খুন-খারাবি ইত্যাদি বাড়িয়া যায়। যেহেতু অনেকে ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে গ্রাম-গঞ্জে চলিয়া যান, তাই এমন আশঙ্কা প্রতিবত্সরই থাকে। এমনকি কেহ কেহ এই সময় জঙ্গি হামলারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে শেষপর্যন্ত এমন কোনো বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে নাই। দেশের কয়েকটি স্থানে খুন-খারাবির ঘটনা ঘটিলেও তাহাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলাই শ্রেয়। ঈদের ছুটিতে এমন খুশির খবরের পিছনে আসলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবদান ও কৃতিত্ব রহিয়াছে। তাহারা পরিকল্পনা মাফিক নিরলস পরিশ্রম করিয়াছেন। ঈদ বাজারগুলিতে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে দেখা গিয়াছে। ফলে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এইক্ষেত্রে যে কার্যকর ভূমিকা পালন করিয়াছেন, তাহা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উন্নয়নে বর্তমান সরকার বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়া আসিতেছে। আমরা বহুবার তাহাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলিয়াছি। বিশেষ করিয়া তাহাদের আবাসন, যানবাহন ও সাজ-সরঞ্জাম লইয়া অধিক লিখিতে হইয়াছে। এইসব সমস্যার সমাধানে কাজ হয় নাই বা চলিতেছে না বলিলে ভুল হইবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাইতেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এইসব সুযোগ-সুবিধা যথাসময়ে ও ঠিকমতন পাইতেছে না। এখনো বিভিন্ন থানায় পুলিশের জন্য গাড়ির সংখ্যা অপ্রতুল। র্যাবের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকিলে তাহারা কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করিবেন? কীভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়া বিপদগ্রস্ত মানুষের পার্শ্বে দাঁড়াইবেন? এমনিতে গাড়ির সংখ্যা কম, তাহার উপর কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করিয়া থাকেন।

আবার দেখা যায়, পুলিশের অধিকাংশ গাড়ির পিছন দিকটা থাকে উন্মুক্ত। ইহাতে পুলিশের নিরাপত্তা লইয়াও আশঙ্কা থাকে। এই সন্ত্রাসবাদের যুগে দেশি-বিদেশি দুষ্কৃতকারী যেকেহ অতর্কিতভাবে তাহাদের উপর হামলা চালাইয়া দ্রুত প্রস্থান করিতে পারে। পুলিশের আবাসন সমস্যা এখনো প্রকট। বিভিন্ন ক্যাম্পে তাহাদের গাদাগাদি করিয়া বসবাস করিতে হয়। তাহাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়াছে নিঃসন্দেহে, তবে এইসব অবকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি। পুলিশের পোশাক-আশাক আজ উন্নত হইয়াছে। কিন্তু তাহাদের কি আমরা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করিতে পারিয়াছি? সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের হাতে আজকাল যে ধরনের উন্নত প্রযুক্তির মারাত্মক অস্ত্র দেখা যায় তাহাতে বিস্মিত হইতে হয়। ইতোমধ্যে নাশকতা তৈরিতে এই দেশে আসা কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে পুলিশ গ্রেফতার করিয়াছে। ইহাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যে সতর্ক আছেন তাহা বোঝা যায়। কিন্তু তাহাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তুলিয়া দিতে না পারিলে তাহারা কীভাবে ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করিবেন? আমরা মনে করি, পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো আধুনিক করা গেলে সমাজের  সার্বিক পরিস্থিতির আরো উন্নতি হইবে,  মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা আরো নিশ্চিত হইবে।