শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাস হইতে ফেলিয়া নৃশংস হত্যা

আপডেট : ১১ জুন ২০১৯, ২১:৩৯

দেশে হত্যা-ধর্ষণ ইত্যাদি ভয়ংকর সহিংস ঘটনা প্রতিদিনই ঘটিয়া চলিতেছে। ধন-সম্পত্তির জন্য, দলীয় রাজনৈতিক কারণে, সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত ঘৃণা হইতে যেমন হত্যার ঘটনা ঘটে, তেমনি ধর্মীয় জঙ্গিবাদী উন্মাদনা হইতেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়া থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হত্যার দুইটি নূতন প্রকরণের দেখা মিলিয়াছে। একটি হইল পুড়াইয়া হত্যা এবং অপরটি বাস হইতে ফেলিয়া দিয়া হত্যা।

বাস হইতে ফেলিয়া দিয়া হত্যার ঘটনা বিগত এক বত্সরে বেশ কয়েকটি ঘটিয়াছে। ২০১৮ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম শহরের সিটি গেট এলাকায় এক যুবককে বাস হইতে ফেলিয়া দেওয়া হয় এবং বাসের চাকায় পিষ্ট হইয়া তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মহাখালীর তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থীকে বাস হইতে ফেলিয়া দিলে, পিছনের একটি বাস তাহাকে চাপা দিয়া হত্যা করে। এই বত্সরের মার্চ মাসে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইবার পথে বাসের হেলপার ধাক্কা দিয়া নামাইয়া দিলে বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হইয়া মৃত্যুবরণ করেন। দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসের লোকজনের সহিত ভাড়া লইয়া বচসা হইবার জের ধরিয়া যাত্রীকে বাসশ্রমিকরা ফেলিয়া দেয়, এবং দুর্ঘটনা ঘটে। এইসকল ঘটনাকে দুর্ঘটনা না বলিয়া হত্যাকাণ্ড বলাই শ্রেয়। সর্বশেষ ঘটনা ঘটিয়াছে গত রবিবার গাজীপুরে। বাসভাড়া লইয়া কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক ব্যক্তিকে বাস হইতে সজোরে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দেওয়া হয় তাঁহার স্ত্রীর সামনেই। দম্পতিটি ময়মনসিংহ হইতে গাজীপুরে ফিরিতেছিল, বাঘেরবাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নামিবার পূর্বমুহূর্তে ঘটনাটি ঘটে।

এইরূপ নির্মম ঘটনা প্রায়ই ঘটিতেছে। অপরাধী কেহ কেহ গ্রেফতারও হইতেছে, কিন্তু স্থায়ী প্রতিকার পাওয়া যাইতেছে না। পরিবহন খাতের শ্রমিকরা অনেক বেপরোয়া, ইহা বারংবার প্রমাণিত হইয়াছে। এই বেপরোয়ার অন্যতম কারণ তাহাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার অভাব।

এই খাতের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার কারণে প্রতিদিন সড়কে মৃত্যুবরণ করিতেছে প্রায় ২০ জন মানুষ। রুট পারমিট ছাড়া বাস চলিতেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক চলিতেছে, লাইসেন্স ব্যতীত ড্রাইভিং সিটে বসিয়া আছে অনভিজ্ঞ কেহ। বাসভাড়ায় কোনো স্থিতিশীলতা নাই, যখন-তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা হইয়া থাকে তাই যাত্রীদের সহিত বচসা হইয়া থাকে। এইসব বিশৃঙ্খলা ঠিক না হইলে বাসশ্রমিকদের শৃঙ্খলা আনায়নও কঠিন হইয়াই থাকিবে।  যাত্রীদের প্রতিবাদও সামান্যই কাজ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাহাদের সহিত পারিয়া উঠে না। এইসকল কারণেই কিশোররা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনে নামিতে বাধ্য হইয়াছিল গত বত্সর। উন্নয়ন ঘটাইবার জন্য যাহারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, সরকারের সেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কঠিন পদক্ষেপ লওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আমাদের হাতে নাই। এই বেপরোয়া খাত কাহাদের প্রশ্রয়ে বর্ধিত হইয়াছে, তাহা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। চিহ্নিত ব্যক্তিদের এই খাত হইতে বিযুক্ত করা প্রয়োজন, আর অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করিয়া কঠোর করা প্রয়োজন, যাহাতে প্রমাণিত অপরাধী সহজে সাজা হইতে মুক্তি না পায়।