শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অর্থ অপচয়

আপডেট : ১২ জুন ২০১৯, ২১:৫২

ক্রয় করিতে বাঙালিরা বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়া থাকে। বিশেষ করিয়া সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে একটি বালিশ ক্রয় করিতে খরচ হইয়াছিল ৬ হাজার ৭১৭ টাকা! রূপপুরের বালিশ ক্রয়ের মতো ঘটনা সরকারি প্রকল্পে প্রায়শই দেখা যায়। বালিশ, তাও অন্তত ঘুমাইবার কাজে লাগিবে; কিন্তু কিছু সরকারি প্রকল্পে এমন অনেক বস্তু ক্রয় করা হয়, যাহা কোনো কাজেই লাগে না। অর্থাত্ অপচয় হইয়া থাকে শতভাগ। কিন্তু তাহাতে কি আসে যায় ক্রয়কমিটির? কথায় আছে যে, ‘সরকারি কা মাল দরিয়ামে ঢাল’। এমনই একটি তুঘলকি কাণ্ডের খবর ছাপা হইয়াছে সহযোগী একটি দৈনিকে। রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের জন্য একটি ১৪ তলা ভবন নির্মাণ অনুমোদনের অপেক্ষায় রহিয়াছে। চমকপ্রদ সব দুর্নীতির কাহিনিকেও হার মানাইয়াছে এই সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল!

খবরে বলা হইয়াছে, এই হাসপাতালের ভবন নির্মাণের এখনো অনুমোদনই হয় নাই। অথচ সরকারি অর্থের অপচয় করিয়া দেদারসে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয় করিতেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ক্রয় করা হইয়াছে অনেকগুলি যন্ত্রপাতি। কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে একেবারেই নষ্ট হইয়া পড়িয়াছে। আবার কোনো কোনো যন্ত্রপাতিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করিয়া নূতন করিয়া আবার সেইগুলি ক্রয় করা হইতেছে। এই হাসপাতালের জন্য একটি এমআরআই মেশিন কেনা হইয়াছে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে। তাহাও কোনো কাজে আসিতেছে না। ইহা ছাড়াও একটি এসটিইএম সেল থেরাপি মেশিন কেনা হইয়াছিল ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে। অথচ অভিযোগ আছে যে, এই রকম মেশিনের বাজারমূল্য ৮০ হইতে ৯০ লক্ষ টাকা। কেবল তাহাই নহে, ওই ৭ কোটি টাকা দিয়া ক্রয়কৃত মেশিনটিও রোগীদের কোনো কাজে আসিতেছে না। কারণ ওই মেশিনের মাধ্যমে থেরাপি দিতে হইলে আরও ৮০ হাজার টাকা মূল্যের পৃথক আরেকটি মেশিন প্রয়োজন হয়, যাহা নাই। এইটুকু জানিয়া শক্ত হইয়া বসিতে হয়। ভাবিতে হয়, এই ধরনের ঘটনার কাছে রূপপুরের বালিশ-কাহিনি তো নিতান্তই শিশুতোষ! বস্তুত, কী নাই, আর কী আছে এবং তাহা কাজে লাগিতেছে কি লাগিতেছে না—তাহাতে কী আসে যায় ক্রয় সংক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের। ক্রয়ের ক্রিয়েশনে তাহারা আমোদিত। কারণ, ওই হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা এখন জার্মানি ঘুরিতে যাইবেন ওই হাসপাতালের জন্য অ্যানেসথেশিয়া ও ভেন্টিলেশন মেশিন যাচাই করিতে!

আমাদের সংবিধান অনুসারে, রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক হইতেছে জনগণ। সুতরাং কোনো ব্যক্তির বা কতিপয় ব্যক্তির ইচ্ছায় রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচের সিদ্ধান্ত হয় না। এইজন্য সংসদ, সংসদীয় কমিটি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও একনেকের মতো আরও বিভিন্ন তদারকি ব্যবস্থা চুলচেরা বিশ্লেষণ করিয়া খতিয়ে দেখে কোনো ব্যয় বরাদ্দের যথার্থতা। এত কিছুর ভিতর দিয়াই অনেক বত্সর ধরিয়াই চলিয়া আসিতেছে এই ধরনের অনিয়ম। কেহ কি নাই—যিনি শক্ত হাতে রাশ টানিয়া ধরিবেন এইসকল অপচয়ের, পুকুরচুরির?