শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভয়াবহ দাবদাহ কীসের আলামত

আপডেট : ১৮ জুন ২০১৯, ২১:৫২

বৈশ্বিক উষ্ণতা মানবজাতিকে দিনে দিনে অধিকতর উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিতেছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা অতীতে যে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন, তাহার চাইতে অনেক দ্রুত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাইতেছে বলিয়া স্বীকার করিতেছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি। ১৯৫০-এর দশকের বিজ্ঞানীরা বলিয়াছিলেন, কয়েক হাজার বত্সরে বৈশ্বিক উষ্ণতায় কিছু পরিবর্তন আসিয়াছে। সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীরা বলিলেন, মানুষের প্রভাবে কয়েক শত বত্সরে আমূল পরিবর্তন আসিবে। নব্বইয়ের দশকে বলিলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন আসিতেছে। এই পরিবর্তনে কত সময় লাগিবে, কত বত্সরে কতটা উষ্ণ হইয়া উঠিবে পৃথিবী, কতটা জগতের ক্ষতি হইবে— তাহা লইয়া বহু তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ পাইতে থাকিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি পরিবেশবিজ্ঞানী, এমনকি রাজনীতিবিদরাও বলিতেছেন এই পরিবর্তন আসিবে অতি দ্রুত— যাহা আমরা কখনোই ভাবি নাই।

তাহারই আলামত দেখিতে পাওয়া যাইতেছে একেকটি বত্সর ঘুরিতে না ঘুরিতেই। গত ১২ জুন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হইয়াছে, যাহা পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও কোনোকালেও দেখা যায় নাই। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড ধারণ করা হইয়াছে। বিহারে ভয়াবহ এনসেফেলাইটিস ও দাবদাহে মৃত্যুবরণ করিয়াছে ৩ শতাধিক মানুষ। বিহারে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হইয়াছে। একদিকে যেমন বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িতেছে, অন্যদিকে তেমনি উষ্ণতার কারণে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের বরফ গলিয়া দ্রুত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াইয়া দিতেছে— যাহা বিশ্ববাসীকে দুশ্চিন্তায় ফেলিয়াছে। মূলত গ্রিনহাউজ ইফেক্টই এই বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান কারণ। ইহার প্রভাবে বহু দেশ অস্তিত্বের হুমকির মধ্যে পড়িয়াছে। উদ্বেগের বিষয় হইল, বৈশ্বিক সূচিতে সর্বাধিক ঝুঁকির দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ রহিয়াছে সপ্তম স্থানে। বিজ্ঞানীরা  বলিয়াছেন, একদিকে বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ হইয়া উঠিবে, অন্যদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে আগামী ৫০ বত্সরে স্থলভূমির ৪০ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হইয়া যাইতে পারে। 

সত্যি কথা বলিতে কি, মানুষ তথা রাষ্ট্রগুলি পরিণতি বুঝিয়া উঠিবার আগেই শিল্প-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা করিতে গিয়া বসবাসের এই বিশ্বকে ক্রুদ্ধ করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু এখন এই তীব্র দাবদাহের বিরুদ্ধে করণীয় কী? এখনো পরিবেশকে আর উষ্ণ না করিবার সময় আছে। প্রয়োজন রাষ্ট্রসমূহের সমন্বিত প্রচেষ্টা। সেই সঙ্গে প্রতিটি দেশের নাগরিকদের  সচেতন থাকিতে হইবে, যাহাতে উষ্ণতা আর বৃদ্ধি না পায়। সেই কথা স্মরণ করাইয়া দিয়াছে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল। তাহারা বলিয়াছেন, প্রত্যেকের একক প্রচেষ্টা বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে বড় ধরনের ভূমিকা রাখিতে পারে। উষ্ণতা ঠেকাইতে বিশ্বের নাগরিক ও ভোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিতে হইবে। তাঁহারা পরামর্শ দিয়াছেন শক্তির অপচয় রোধ করিতে হইবে, প্রতিটি ব্যাবহারিক জিনিসের পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা করিতে হইবে।