শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আর কতদিন লোকসান করিবে বিআরটিসি?

আপডেট : ১৯ জুন ২০১৯, ২১:৫৮

সরকারি করপোরেশন হইবার কারণে, বিপুল বিনিয়োগ ও নানান করসুবিধা পাইবার পরও, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) লোকসান কাটাইয়া উঠিতে পারিতেছে না। বরং বিআরটিসির বহরের প্রায় ১ হাজার ৪০০ বাসের মধ্যে ৩৮ শতাংশ অচল হইয়া পড়িয়া আছে। এই অচল বাসগুলির সিংহভাগই গত ১০ বত্সরে ক্রয় করা হইয়াছে। তদুপরি, ভারত হইতে নূতন করিয়া ক্রয় হইতেছে ৬০০ বাস এবং ইহার পরও লোকসান কাটিবে কি না কেহই নিশ্চিত করিয়া বলিতে পারে না। গত এক দশকে নূতন বাস-ট্রাক ক্রয়ে বিআরটিসিকে বিনিয়োগ করিতে হইয়াছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিপুল এই বিনিয়োগের পরও লোকসান হইতে বাহির হইতে পারে নাই রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থাটি। ২০১৭-১৮ অর্থবত্সরে বিআরটিসির লোকসান হইয়াছে ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। লোকসানের জন্য বিআরটিসির কর্তারা চীন ও কোরিয়া হইতে ২০১৩ সালে ক্রয়কৃত ৫৩০টি বাসের কথা বলিতেছেন। চীনা বাসগুলির ইঞ্জিন ছিল অত্যন্ত দুর্বল, যাহার কারণে দ্রুত নষ্ট হইয়া গিয়াছে। আর কোরিয়ান বাসগুলির খুচরা যন্ত্রাংশ অপ্রতুল হওয়ায় মেরামত করা সম্ভব হয় নাই। তাই বাসগুলি সংস্থাটির বোঝায় পরিণত হইয়াছে। সর্বশেষ পে-স্কেলে বেতন বৃদ্ধিও নাকি লোকসান না কাটিবার অপর একটি কারণ, যেমনটি বিআরটিসির সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলিয়াছেন। তবে ধারাবাহিক লোকসান কাটাইয়া চলতি অর্থবত্সর (২০১৮-১৯) মুনাফার প্রত্যাশা করিতেছে সংস্থাটি, বিগত কয়েক বত্সরের হিসাবে নাকি সেই লক্ষণ স্পষ্ট রহিয়াছে। সামপ্রতিক সময়ে কেবল ২০১৪-১৫ সালেরই একবার মুনাফার মুখ দেখিয়াছিল সংস্থাটি।

কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান হইবার কারণে বিআরটিসি কিছু সুবিধা এমনিতেই ভোগ করিয়া থাকে। তাহাদের বাস পরিচালনায় রুট পারমিট লাগে না। রুট পারমিটের জন্য কাহারও সহিত প্রতিযোগিতাও করিতে হয় না। জনপ্রিয় রুটগুলিতে সেবা দিবার একচেটিয়া সুযোগ তাহাদের রহিয়াছে। বাস-ট্রাক রাখিবার জন্য সারা দেশেই তাহাদের বিপুল পরিমাণ স্থান রহিয়াছে, ফলে যানবাহন রাখিবার জন্য কোথাও ভাড়া দিতে হয় না। প্রয়োজনের তুলনায় কম হইলেও নিজস্ব জনবল রহিয়াছে। এত কিছু থাকিবার পরও একটা সংস্থা কেন দিনের পর দিন লোকসান করিবে? গত অর্থবত্সরে প্রতি ১০০ টাকা আয় করতে গিয়ে ১০১ টাকা ১৫ পয়সা খরচ করিয়াছে বিআরটিসি। গত ১০ বত্সরে বিআরটিসির বহরে ২ হাজারের বেশি নূতন বাস যুক্ত হইলেও সংস্থাটির আয়ে ইহার তেমন কোনো প্রভাব পড়ে নাই। ২০০৭-০৮ সালে মাত্র ৩১৮টি বাস দিয়া ১০৫ কোটি টাকা আয় করিয়াছিল সংস্থাটি। আর গত  অর্থবত্সরে প্রায় দেড় হাজার বাস দিয়াও আয় হইয়াছে মাত্র ২৫৬ কোটি টাকা। দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণেই যে এইরূপ হইতেছে, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাও একটি কারণ হইতে পারে। তাই সরকারের উচিত বিআরটিসির সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করিয়া প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা। আর  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্নীতির মূল খুঁজিয়া বাহির করিয়া সেই মূলোত্পাটনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।