শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুমিল্লা চিড়িয়াখানার বেহাল দশা

আপডেট : ২৩ জুন ২০১৯, ২২:১১

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাইয়াছে। ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশাপাশি নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ভ্রমণ করিতেছেন অবকাশ পাইলেই। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রদত্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বছরে এখন ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ মানুষ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরিতে যান। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত মানুষের সংখ্যা ১৫ লক্ষ। আর পরোক্ষভাবে আরও ২৩ লক্ষ মানুষ ইহার সহিত জড়িত। সব মিলাইয়া প্রায় ৪০-৪৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করিয়াছে পর্যটন খাত। আর্থিক মূল্যে দেশীয় পর্যটন খাতের আয়তন বেড়ে এখন দাঁড়াইয়াছে কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকার; কিন্তু সেই অনুপাতে দেশে পর্যটন সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো যেমন কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, কুয়াকাটা একদিকে যেমন অপরিকল্পনা ও পর্যটকদের সংখ্যাধিক্যে-অসচেতনতায় মলিন হইয়া উঠিতেছে এবং দেশের স্থানীয় পর্যায়ে ছড়াইয়া ছিটাইয়া থাকা পর্যটন কেন্দ্রগুলি অবকাঠামোভাবে ভঙ্গুর হইয়া আছে। তেমনি এক চিত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন নিয়া প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে। ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে স্থাপন করা হয় কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর ব্যবস্থাপনায় রহিয়াছে জেলা পরিষদ। দর্শনার্থীদের আনাগোনায় একসময় কুমিল্লা চিড়িয়াখানা বেশ সরগরম ছিল; কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সেসব এখন স্মৃতি। কারণ বর্তমানে প্রায় পশুপাখি শূন্য এই চিড়িয়াখানায় আসিয়া দর্শনার্থীরা হতাশ হইয়া ফিরিতেছেন। চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহ, ময়ূর আর টার্কি মোরগের খাঁচা শূন্য পড়িয়া আছে। জানা যায়, পানি ও খাবারের অভাবে আর কুমিল্লা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ’যুবরাজ’ নামের সিংহটি মারা গিয়াছে। খাঁচায় যে কয়েকটি পশুপাখি রহিয়াছে সেইগুলিও আছে অযত্ন আর অবহেলায়। বিভিন্ন খাঁচায় রহিয়াছে দুইটি মেছো বাঘ, ১০টি বানর, তিনটি হরিণ, দুইটি খরগোশ, দু্ইটি অজগর, একটি ঘোড়া, একটি হনুমান, একটি গন্ধ গোকুল, দুইটি কালেম পাখি, দুইটি তিতি মোরগ, দুইটি বাজপাখি ও একটি চিল। এইগুলির বেশিরভাগই রুগণ দশায়। চিড়িয়াখানায় তেমন দর্শনার্থীও নাই। বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থাও বেহাল। খানাখন্দে ভরা। অধিকাংশ জায়গা কচুরিপানা, ঝোপ-জঙ্গল ও আগাছায় আচ্ছন্ন হইয়া আছে। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ইহার কোনো উন্নতি নাই, মুখ থুবড়াইয়া পড়িয়া আছে। এইসকল কারণে অভিভাবক ও স্বজনেরা শিশু কিংবা আপনজনদের নিয়া এইখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের এই জরাজীর্ণ দশা সত্যিই দুঃখজনক। যথোপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়া ইহার অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিকায়ন, রাইড স্থাপন এবং জীবজন্তু ও পশুপাখির সংযোজন করা গেলে ইহা প্রাণ ফিরিয়া পাইবে। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।