বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী হয়রানি

আপডেট : ২৪ জুন ২০১৯, ২১:২৯

সিএনজি অটোরিকশা চালকদের স্বেচ্ছাচারে অতিষ্ঠ ঢাকাবাসীর সামনে স্বস্তির কারণ হইয়া দেখা দেয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলির সেবা। কিন্তু এই সেবা খাতে এখন অস্বস্তি ক্রমেই বাড়িতেছে। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবার সর্বপ্রথম এই দেশে অ্যাপনির্ভর রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করে। ইহার পর দ্রুত তাহা তরুণ জনগোষ্ঠীর নিকট জনপ্রিয় হইয়া উঠে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২০টির মতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গড়িয়া উঠিয়াছে। ঢাকায় এখন এক লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি রহিয়াছে। প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় ৩০ হাজারেরও বেশি রাইড শেয়ারিং হয়। কিন্তু বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন অনুসরণ না করিবার কারণে ইদানীং এই সেবা খাতে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হইয়াছে। এই সেবার মূল উদ্দেশ্য ছিল যানজট দূর করা। কিন্তু নূতন নূতন গাড়ি ও কোম্পানি আসিবার কারণে রাইড শেয়ারিং এখন নিজেই নূতন করিয়া জট তৈরি করিতেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল সড়কে তৈরি করিতেছে বিশৃঙ্খলা। ইহা ছাড়া যে হারে যাত্রী হয়রানি বাড়িতেছে তাহা উদ্বেগজনক। যাত্রা বাতিল করা, যাত্রীদের সহিত দুর্ব্যবহার, একজনের ট্রিপ নিয়া অন্য কাউকে গাড়িতে তোলা ও যাত্রাপথে মাঝখানে যাত্রীদের নামাইয়া দেওয়া, অ্যাপে না গিয়া ট্রিপে শেয়ারিং করা, নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া এমনকি নারী যাত্রীদের যৌন হয়রানিরও অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের চালকদের বিরুদ্ধে। বেশি ট্রিপের জন্য দ্রুত গাড়ি চালাইতে গিয়া ঘটিতেছে নানা দুর্ঘটনাও।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে রাইড শেয়ারিং সেবা দিতেছে, এমন কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হইল— উবার, পাঠাও, স্যাম ওবোন, ওভাই, ওভাই মটো, ওভাই সিএনজি, ওভাই মাইক্রো, সহজ ইত্যাদি। এইসব যানবাহনে যাত্রী হয়রানি বন্ধ না হইবার বড় কারণ হইল— গ্রাহক সেবা দেওয়ার জন্য এইসব কোম্পানির কোনো কাস্টমার সেন্টার নাই। সেই কারণে অ্যাপের মাধ্যমে অনেক গ্রাহক ঠিকমতো অভিযোগ দায়ের করিতে পারেন না। শীর্ষস্থানীয় একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি অন্য দেশ হইতে ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের কারণে কোনো গ্রাহক কোনো অভিযোগ করিলে তাহার জবাব পাইতে লাগিয়া যায় কয়েক দিন। অনেক সময় অ্যাপে অভিযোগ করিলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। এইজন্য এইসব সেবাদাতা কোম্পানিকে একটি নিয়ম-নীতির আওতায় আনিতে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭’ প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গত বত্সর ৩ মার্চ ইহা কার্যকর হইয়াছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হইল, সেই নীতিমালা ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নাই’-এর মতো বাস্তবে তাহার প্রয়োগ নাই। কোম্পানিগুলিকে লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলা বলা হইলেও এই প্রক্রিয়া এখনো চালুই হয় নাই।

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭-এর অনুচ্ছেদ (ক) ধারা ১০ অনুযায়ী নূতন ক্রয় করা মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন এক বত্সর অতিবাহিত না হইলে তাহা রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত করা যায় না। নীতিমালার ৩(খ) ধারা অনুযায়ী যে কোনো দূরত্বে যাত্রী বহনে বাধ্য ইহার চালকরা। রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করিয়া ‘কোথায় যাইবেন’ বলাটা নীতিমালার পরিপন্থি। ইহা ছাড়া অনেক চালক ম্যাপ ফলো করিয়া ঠিকমতো পিক-আপ পয়েন্টে আসেন না। নির্ধারিত রুট না মানিয়া অন্য রুটে চলিয়া যাইবার কারণে ভাড়া বেশি গুনিতে হয়। এইসব সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি খারাপ রেটিংপ্রাপ্ত চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দিয়াছে।