সড়কে যানবাহন চলাচলে কতটা বিশৃঙ্খলা চলিতেছে তাহার চিত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে উচ্চ আদালতে দাখিল করা বিআরটিএর প্রতিবেদনের মধ্য দিয়া। গত ২৭ মার্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া ঢাকাসহ সারা দেশে ফিটনেসবিহীন, নিবন্ধনহীন যানবাহন এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য প্রতিবেদন আকারে দাখিল করিতে নির্দেশ দিয়াছিলেন। নির্দেশ অনুযায়ী দাখিলকৃত প্রতিবেদনে জানানো হইয়াছে, সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনের পর ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ির সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৩৬৯টি। আরো দুঃখজনক কথা হইল, শুনানির সময় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আদালতে জানাইয়াছে, দেশে নিবন্ধনহীন গাড়ির সংখ্যা কত—তাহা বিআরটিএর জানা নাই। স্বাভাবিকভাবেই মাননীয় আদালত ক্ষুব্ধ হইয়াছেন পুলিশ প্রশাসনের ওপর। কারণ রাস্তায় দাপাইয়া বেড়ানো এই গাড়িগুলি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের। উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে জেলা রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি রহিয়াছে, যেই কমিটি যানবাহনের রুট পারমিট দিয়া থাকে। কিন্তু বিআরটিএ বা রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট নিবন্ধন দিয়াই খালাস। রাস্তায় একটি যান নিবন্ধন লইয়া নামিল, তো পুলিশের দায়িত্ব অর্পিত হইল।
এই ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ কিছু দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন রহিয়াছে। দেশ যেইভাবে আগাইতেছে, যেই হারে আধুনিক যানবাহন প্রতিনিয়ত প্রবেশ করিতেছে, সেই তুলনায় পুলিশকে আধুনিক করিবার কাজটি আগায় নাই। অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের আধুনিক সরঞ্জামাদি নাই। শত শত গাড়ি যেই সকল রাস্তায় চলাচল করে সেইসকল রাস্তায় একটি একটি করিয়া গাড়ির কাগজপত্র, ফিটনেস, লাইসেন্স পরীক্ষা করা আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব কাজ। উন্নয়নশীল দেশগুলি ছাড়া কোথাও রাস্তায় এইভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করিতে দেখা যায় না। উন্নত দেশগুলিতে রাস্তায় টহল পুলিশ থাকে বটে, কিন্তু বিশেষ কারণ ছাড়া কোনো গাড়িকে তাহারা পথরোধ করে না। কোনো গাড়ি রাস্তার সংকেত অমান্য করিলে তাহা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশের নজরে চলিয়া যায়। তত্ক্ষণাত্ পুলিশের সঙ্গে থাকা গাড়িতে সংকেত চলিয়া যায়। কত নম্বর গাড়ি, কোন রাস্তায় ইত্যাদি। এখনই এতখানি সম্ভব না হইলেও পুলিশকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করিবার ব্যবস্থা করা এখন জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন মোটরসাইকেলসহ মোট ৩৫ লক্ষ নিবন্ধিত যানবাহন রাস্তায় চলিতেছে। ইহার মধ্যে ২২ লক্ষ মোটরসাইকেল। বিভিন্ন বেসরকারি হিসাব বলিতেছে অনিবন্ধিত গাড়িসহ দেশের রাস্তায় প্রায় ৪৫ লক্ষ মোটরযান চলাচল করে। এই বিশালসংখ্যক যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কতসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ রহিয়াছে তাহাও বিচার্য। কিন্তু তাহার পরও যাঁহারা রহিয়াছেন তাঁহারাও-বা কতটুকু আন্তরিক, কতটা পরিশ্রমী এবং কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করিতেছেন, সেই বিষয়েও প্রশ্ন রহিয়াছে। অধিকন্তু যাঁহারা গাড়ি চালাইবেন অথচ ফিটনেস নবায়ন করিবেন না—তাহাদের এই প্রবণতাও গর্হিত। এই বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ হইতে অসচেতন জনগণকে বারবার সতর্ক করার প্রয়োজন রহিয়াছে।