বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সামাজিক অস্থিরতাকে উপেক্ষা করিবার অবকাশ নাই

আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৯, ২২:৩১

মোবাইল ফোনে বান্ধবীর সহিত ছবি তোলাকে কেন্দ্র করিয়া সহপাঠী কিশোর গ্যাং গ্রুপের হাতে গত ৬ জুলাই খুন হইয়াছে নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহমেদ। তাহার বয়স মাত্র ১৬ বত্সর। খুনও করিয়াছে ওই বয়সি ছেলেরা। ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরিয়া শুভকে হত্যা করে তাহার সহপাঠীরা।  

দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা গত কয়েক বত্সর ধরিয়া সংবাদপত্রে অসংখ্যবার উঠিয়া আসিয়াছে। ইহা লইয়া আমরা সম্পাদকীয়ও লিখিয়াছি একাধিক। যেইভাবে এই ধরনের অপরাধ লাগামছাড়া হইতেছে, তাহাতে ভবিষ্যতে হয়তো আরও অনেকবার লিখিতে হইবে; কিন্তু প্রশ্ন হইল, কেন বৃদ্ধি পাইতেছে এই ধরনের অপরাধ? ইহা কিসের আলামত? কোন কোন অসংগতির বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সমাজে এই অস্থিরতা বৃদ্ধি পাইতেছে? ইহা লইয়া প্রশ্নের পর প্রশ্ন গাঁথিয়া তোলা যায়; কিন্তু কেবল প্রশ্নমালা গাঁথিলেই তো সমাধান আসিবে না। বরং যাইতে হইবে সমস্যার মূলে। এইক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশে এই গ্যাং কালচার তৈরি হইতে দেখা যায়—যাহাকে আইনের ভাষায় বলা হয় ‘জুভেনাইল সাবকালচার’। আর এই কিশোররা যখন বড়ো হয় তখন এই ঔদ্ধত্যের জাল হইতে সহসা আর বাহির হইতে পারে না। এইভাবে সমাজে একটি বেপরোয়া শ্রেণি তৈরি হয়—যাহাদের ভিতরে সামাজিক মূল্যবোধ কিংবা মানবিক উন্মেষ বলিয়া কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না।

এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে সমাজবিশ্লেষকরা মনে করেন, সামাজিক অস্থিরতা রোধে কেবল আইন কঠোর করিলেই হয় না, কঠোর হাতে দমন করিলেও হয় না—রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত অস্থিরতাও দূর করিতে হয়। কেননা, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র একই ইটের সারিতে গাঁথিয়া উঠিয়াছে। ইহার কোনো কোনো ইটের এদিক-ওদিক ঘটিলে তাহার প্রভাব অন্যটির উপর পড়িতে বাধ্য। যাহার প্রকাশ দেখা যাইতেছে সমাজের সর্বত্র। ইহা ঠিক যে, পারিবারিক পরিমণ্ডল হইতেই শিশু তাহার চরিত্র গঠন ও বুদ্ধিবৃত্তির পাঠ নেয়। তাই পিতামাতা যদি সদাচারী, সত্যভাষী, সহনশীল ও নৈতিকতা বোধে দীপ্ত হয়, তবে পরিবারের শিশুরাও তাহা অনুসরণ করিবার সুযোগ পায়; কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীরা দেখিতেছেন যে, বর্তমানে সেই কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নাই বেশির ভাগ পরিবার। যথার্থ জীবন দর্শন ও জীবনদৃষ্টির অভাব পরিবারগুলিতে এখন প্রকট হইয়া দেখা দিতেছে।

কিন্তু কেন পরিবারের মনস্তত্ত্বে প্রোথিত হইতেছে মূল্যবোধের বিপরীত বৈশিষ্ট্যসমূহ? যেহেতু পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র একই ইটের সারিতে গাঁথিয়া উঠিয়াছে, সেই কারণে সমাজ বা রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো অস্থিরতা তৈরি হইলে তাহা ব্যক্তিপরিবারেও সংক্রমিত হয়। সুতরাং এই ধরনের অস্থিরতা আরো বড়ো কোনো বিপর্যয়ের আলামত কি না, তাহাও খুঁজিয়া দেখিতে হইবে। ইহাকে অবহেলা বা উপেক্ষা করিবার অবকাশ নাই।