রবিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯-এর জমজমাট আসরের সমাপ্তি ঘটিল। এইবারের আসর বসিয়াছিল ইংল্যান্ডে। খেলা ইংল্যান্ডে হইলে কী হইবে, বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ক্রিকেটজ্বরে আক্রান্ত হইয়া মাসাধিককাল সময় পার করিয়া দিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল লইয়া দেশবাসী স্বপ্ন দেখিয়াছিল। কেহ বলিল, সেমিফাইনাল খেলিবে, কেহ বলিল ফাইনালে উঠিবে। অতি অন্ধভক্ত কেহ কেহ বলিল বাংলাদেশ এইবার চ্যাম্পিয়ন কাপের দাবিদার। স্বপ্ন দেখায় ক্ষতি নাই—সেই স্বপ্ন যদি বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলটি পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক শক্তিশালী ছিল—ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। দলে অভিজ্ঞ অনেক খোলোয়াড় ছিলেন, বিশ্বমানের খেলোয়াড়ও ছিলেন। দল শুরুও করিয়াছিল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ক্রিকেট ঐতিহ্যের দুই মহাশক্তিকে পরাস্ত করিয়া। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা আর শেষাবিধ ধরিয়া রাখিতে পারে নাই। ফলে সেমিফাইনালে আর ওঠা হয় নাই। তখনই বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন লইয়া শুরু হইল জগাখিচুড়ি অবস্থা। এইবার আর একক কোনো দলের প্রতি দেশের মানুষ সমর্থন রাখিতে পারিল না। অনেকে টেলিভিশনের সামনে বসিয়া নির্ধারণ করিল সে কোন দলকে সমর্থন করিবে। অর্থাত্ অবস্থা দাঁড়াইল আক্ষরিক অর্থেই সেই সর্বজনবিদিত প্রবাদের মতো—‘নাইয়ার এক নাও, নিনাইয়ার শতেক নাও।’ অর্থাত্ যাহার একখানি নৌকা আছে, তাহাকে ঐ নৌকা ব্যবহার করিয়াই পারাপার বা চলাচল করিতে হয়। কিন্তু যাহার কোনো নৌকা নাই সে সব নৌকাই ব্যবহার করিয়া থাকে! তাহার মানে, বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের দল প্রতিযোগিতা হইতে ছিটকাইয়া পড়িবার পর যে যেই দল পাইল, সেই দলে ভর করিল।
আরো আছে। কেহ চাহিল অমুক দলটি যেন জিতিয়া যায়, আবার কেহ চাহিল অমুক দলটি যেন ঠকিয়া যায়। সেই চর্চাটিও খুব ভালো হইল না। আবার কেহ কেহ খেলা দেখিল বটে, কিন্তু বুঝিতে পারিল না, সে কোন দলের সমর্থন করিতেছে। চোখ টেলিভিশনের দিকে রাখিয়া একবার ইংল্যান্ড, আবার নিউজিল্যান্ডকে সমর্থন করিতে থাকিল। শতেক নাওয়ে উঠিলে এইরকম হইবারই কথা। আগামী চার বত্সর পর আবার ফিরিয়া আসিবে সীমিত ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আমাদের ক্রিকেটের প্রতি শুভ কামনা রহিল যাহাতে আর অন্যের নাওয়ে যেন উঠিতে না হয়। শেষ পর্যন্ত যেন দেশবাসী নিজেদের দলকেই সমর্থন দিয়া যাইতে পারে। অবশ্য সেইজন্য দেশের ক্রিকেটকেও আরো প্রস্তুত হইতে হইবে। দেশ চষিয়া নূতন প্রতিভাবান ক্রিকেটার অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিতে হইবে। সঠিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করিতে হইবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবার মনোবল দৃঢ় রাখিতে হইবে। তাহা হইলে আর নিজেদের দল রাখিয়া অন্য ‘নাও’-এ চড়িয়া বসিতে হইবে না। সর্বোপরি ক্রিকেটারদের জন্য, বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য আমাদের শুভ কামনাই থাকিল।