শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কাহার নির্দেশে চলিতেছে কারসাজি?

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৯, ২১:৩৩

বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের রহিয়াছে অযুত সম্ভাবনা। বিশ্বব্যাপী এই খাতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। প্রযুক্তির কল্যাণে ফাইবার বা কৃত্রিম আঁশের উত্পাদন বাড়িলেও তুলার চাহিদা মোটেও কমে নাই। ইহা ছাড়া এই দেশে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নতির কারণে বস্ত্র খাতের পরিধিও বাড়িয়াছে। আবার এই দেশে উত্পাদিত সুতার গুণগত মানও ভালো। এই কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু এই খাতের বর্তমান কিছু সংকট এই শিল্পকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করিয়া দিবে বলিয়া অনেকে আশঙ্কা করেন। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে বন্ডের অবৈধ সুতা বিক্রির সঙ্গে যুক্ত একটি বড়ো চক্রের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। সেই সূত্র ধরিয়া শতাধিক অবৈধ সুতা ও কাপড় ব্যবসায়ীর তালিকা বিভিন্ন উত্স হইতে সংগ্রহ করিয়াছে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান। ইহার বাহিরে ঢাকার ইসলামপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকার মার্কেটে বস্ত্র ও পোশাকের অবৈধ পাইকারি ব্যবসায়ীদের একটি তালিকাও পাইয়াছে তাহারা। কিন্তু প্রশ্ন হইল, সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অ্যাকশনে যাইতেছেন না কেন? তাহারা কাহার নির্দেশের অপেক্ষা করিতেছেন? ইতোমধ্যে কিছু নিরীহ লোকজনকে যে ধরা হয় নাই, তাহা নহে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড়ো মাপের অবৈধ কারবারিদের কেশাগ্রও স্পর্শ করা হয় নাই।

উল্লেখ্য, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করিবার জন্য রপ্তানি বাণিজ্যকে শক্তিশালী ও বিস্তৃত করিতে সরকার বন্ড সুবিধার মাধ্যমে রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামালের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়া থাকে। কিন্তু একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করিয়া স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করিয়া দিতেছে। ইহাতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাইতেছে, তেমনি আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের ঘটনা ঘটিতেছে। অর্থাত্ পণ্যের মূল্য কমবেশি দেখাইবার প্রবণতা বাড়িতেছে। বন্ড সুবিধায় বিদেশ হইতে আনা কাঁচামালে শুল্ক ও কর দিতে হয় না। তবে এই শর্ত থাকে যে, কাঁচামাল আনিয়া তাহা পুরাপুরি ব্যবহার করিয়া আবার রপ্তানি করিতে হইবে। কিন্তু ইহার ব্যত্যয়ে বস্ত্রশিল্প খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়িতেছে। বন্ড রেয়াতি শুল্ক সুবিধার অপব্যবহার করিয়া সুতা ও কাপড় বিক্রয়ের সঙ্গে যাহারা জড়িত, তাহাদের বেশিরভাগই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও টানবাজার, গাজীপুর, নরসিংদীর বাবুরহাট ও মাধবদী, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও শাহজাদপুরে এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করিয়া থাকে।

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকিবার অভিযোগে এই পর্যন্ত যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে আমরা মনে করি তাহা যথেষ্ট নহে। আবার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা উচিত। যত্রতত্র অভিযানের মাধ্যমে এই শিল্পে কোনো প্রকার আতঙ্ক সৃষ্টি করাও কাম্য নহে। দেশে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টের সম্ভাবনা বাড়িলেও এই দুই সেক্টরকে ধ্বংস করিয়া দিবার চেষ্টাও চলিতেছে বলিয়া অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন। আমরা এই কথাও শুনিতে পাই যে, বাংলাদেশের ব্যাংক, টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলের ওপর অনেকের শ্যেনদৃষ্টি রহিয়াছে। এমনকি কোনো কোনো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আমাদের দেশে এমন শিল্প-কলকারখানার দরকার নাই, এমন মন্তব্যও করিয়াছে বলিয়া জানা যায়। শেষ পর্যন্ত তাহারই কি আয়োজন চলিতেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উঠিয়াছে এই প্রশ্নও।