বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কমিতেছে আর্সেনিকের প্রকোপ

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৯, ২১:৩৪

আর্সেনিক একটি নীরব মারণ ঘাতক। ইহা মূলত একপ্রকার রাসায়নিক উপাদান। পানিতে স্বল্প মাত্রায় আর্সেনিক সর্বদাই উপস্থিত থাকে।  পরিমিত মাত্রা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নহে। কিন্তু যখনই এই মাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হইয়া যায়, তখনই তা পানকারী বা ব্যবহারকারীর শরীরে নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে রোগব্যাধি মারাত্মক পর্যায়ে লইয়া যায়। যকৃত্, ত্বক, কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি করিয়া থাকে যাহা মৃত্যুঝুঁকি টানিয়া আনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকিলে সেই পানিকে দূষিত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকিলে সেই পানিকে অনিরাপদ হিসাবে ধরা হয়। ২০০৭ সালের একটি গবেষণায় দেখানো হয়, বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে, ১৩৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। কিন্তু এই বৈশ্বিক বিপর্যয়কে ছাড়াইয়া গেছে গাঙ্গেয় উপত্যকার আর্সেনিক দূষণ। বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বড়ঘরিয়া ইউনিয়নের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি আবিষ্কৃত হয়। ইহার পর ২০০১ সালে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে বাংলাদেশের ৬১টি জেলার নলকূপের পানি পরীক্ষা করিয়া জানায়,  দেশের ৪২ শতাংশ নলকূপের পানিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক রহিয়েছে। তখনই ইহা বড়ো দুশ্চিন্তার কারণ হইয়া উঠিয়াছিল। ইহার পর সকারের পক্ষ হইতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইতে থাকে আর্সেনিকের প্রকোপ কমাইতে। আর্সেনিক বিষয়ে জনগণকে সচেতন করিয়া তুলিতে নানা প্রচারণামূলক কার্যক্রম গৃহীত হয়। আর্সেনিকে আক্রান্তদের চিকিত্সায় আগাইয়া আসে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও। পাশাপাশি স্থাপন করা হইতে থাকে আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ। তাহারই ফল এখন পাওয়া যাইতেছে। সারাদেশে পূর্বের তুলনায় আর্সেনিকের প্রকোপ বেশ কমিয়া আসিয়াছে। এমনই একটি সংবাদ রবিবার প্রকাশিত হইয়াছে দৈনিক ইত্তেফাকে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গত আড়াই বছরে স্থাপন করা হইয়াছে ১০৭৫টি আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ। ইহার প্রভাবে আড়াইহাজারে এখন আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়া আসিয়াছে। একসময় অত্র এলাকায় আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সরকারের পদক্ষেপের কারণে আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা এখন কমিয়া আসিয়াছে। এখন গ্রামের মানুষ আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের পানি নির্ভয়ে পান করিতে পারিতেছে। উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের ৩১৫টি গ্রামে এই নলকূপগুলো স্থাপন করা হইয়াছে। ২০১৭ সাল হইতে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত এই আর্সেনিকমুক্ত নলকূপগুলি বসানো হইয়াছে। আমরা জািন, শুধু আড়াইহাজারেই নহে, গোটা দেশে, প্রায় সকল জেলাতেই কমবেশি আর্সেনিকজনিত সমস্যা রহিয়াছে। আড়াইহাজারের মতন সারা দেশেই আর্সেনিকের প্রকোপ লাঘব করিতে চেষ্টা চলিতেছে। প্রয়োজন কেবল নিষ্ঠার সঙ্গে আর্সেনিকমুক্তির কাজ চালাইয়া যাওয়া। আর্সেনিকের সমস্যা যতদিন না পুরোপুরি নির্মূল হইতেছে ততদিন পর্যন্ত  উদ্বেগ থাকিয়াই যাইবে।