বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাধ্যতামূলক হইতেছে কারিগরি শিক্ষা

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৯, ২১:২৭

বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার দেশ। এইখানে একদিকে রহিয়াছে কর্মসংস্থানের অভাব, অন্যদিকে রহিয়াছে দক্ষ জনবলের ঘাটতি। দক্ষ জনবলের অভাবে একদিকে দেশের উত্পাদনশীলতা হ্রাস পাইতেছে, পাশাপাশি বিদেশে যে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হইতেছে তাহারাও সঠিক মূল্য পাইতেছেন না। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাহিরের দেশের আনুমানিক  ১০ লক্ষ মানুষ এনজিও, তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাত ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করিতেছেন। ফলে   দেশীয় দক্ষ শ্রমশক্তি দ্বারা এই স্থানগুলি  পূরণ করা সম্ভব হইতেছে না। এই সংকট মোকাবিলায় সাম্প্রতিক সময়ে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান করা হইয়াছে। বাংলাদেশে গত এক দশকে বহু কারিগরি কলেজ এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়িয়া উঠিয়াছে।  দেশে যে লক্ষ-লক্ষ তরুণ-তারুণী চাকরির বাজারে আসিতেছে, তাহাদের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিতে পারে। আশার কথা হইল, ২০২১ সাল হইতে সকল বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হইবে  বলিয়া জানানো হইয়াছে। ষষ্ঠ হইতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হইবে। পরবর্তী সময়ে নবম-দশম শ্রেণিতে একটি বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণ করিতে হইবে। ইহা ছাড়া সরকার ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ শতাংশ (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে) এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করিয়াছে।

বলিতেই হয়, সরকারের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক এবং সময়োপোযোগী। দেশে প্রতিবত্সর ২২ লক্ষ লোক শ্রম বাজারে প্রবেশ করে; কিন্তু যে পরিমাণ দক্ষতা প্রয়োজন উহা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাই। ফলে অধিকাংশই দক্ষতা লইয়া শ্রমবাজারে প্রবেশ করিতেছে না। ইহাতে দেশের যে পরিমাণ উত্পাদনশীলতা থাকিবার কথা, অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে যেইভাবে আগাইয়া যাওয়ার কথা তাহা ব্যাহত হইতেছে। জানা গিয়াছে, সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে দেড় কোটি তরুণের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করিয়াছে। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করিতে 'জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ' গঠন করা হইয়াছে। দেশে সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতেও কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হইতেছে। আগামী বছর হইতে ৬৪০টি বিদ্যালয় কারিগরি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হইবে। বর্তমানে সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৮ হাজারের মতো কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রহিয়াছে। এই ৮ হাজার কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হইয়াছে। দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা মিলাইয়া যত শিক্ষার্থী আছে তাহার প্রায় ১৩ শতাংশ টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয়। অর্থাত্ বাকি ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করিতেছে। বিশ্লেষকরা বলিতেছেন, বাস্তবতায় এটি অন্তত দ্বিগুণ হওয়া উচিত ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চার বছর মেয়াদি থেকে শুরু করিয়া তিন মাস মেয়াদি পর্যন্ত নানা ধরনের কারিগরি কোর্স পড়ানো হইতেছে। কিন্তু এই কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর মান লইয়া প্রশ্ন রহিয়াছে। নানা সীমাবদ্ধতা রহিয়াছে তাহাদের। সরকারকে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। সর্বোপরি কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টি ও জাতীয় অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হইবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়নও ঘটিবে।